অপ্রতিরোধ্য কর্ম কি।
অপ্রতিরোধ্য কর্ম কি ? আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
অপ্রতিরোধ্য কর্ম হল গুরুকর্ম। এ গুরুকর্ম কুশল পক্ষে মহৎগত কর্মকে বলে। ধ্যানলাভী সাধুসজ্জন মরণের পর অপায়গতি না হয়ে লব্ধ ধ্যানস্তর অনুসারে ব্রহ্মালোকে উৎপন্ন হয়। অকুশল পক্ষে গুরুকর্ম হল পঞ্চান্তরিয় কর্ম ও নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি।
০৬টি অনন্তরিয় গুরুকর্মঃ
১। জননী মাতাকে হত্যা
২। জনক পিতাকে হত্যা
৩। অরহত হত্যা
৪। জীবিত বুদ্ধের রক্তপাত
৫। সংঘভেদক কর্ম (গুরুকর্ম যে কোনটিকে নিজে এবং অন্যের দ্বারা করলে অনন্তরিয় কর্ম হয়)।
৬। নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি।
নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি কি?
১। অহেতুক মিথ্যাদৃষ্টি- পাপ-পুণ্য কর্মের কারণকে (চেতনাকে) অবিশ্বাস।
২। নাস্তিক মিথ্যাদৃষ্টি- পাপ-পুণ্যের ফল অবিশ্বাস। মা- বাবার গুণ অস্বীকার। পরকাল অবিশ্বাস (মরে গেলে কিছুই থাকে না সব শেষ হয়ে যায় এ মিথ্যা ধারনা।
৩। অক্রিয়া মিথ্যাদৃষ্টি- পাপ-পুণ্য কর্মকে অবিশ্বাস। এ ৩টি মিথ্যাদৃষ্টি থেকে যে কোনটিকে দৃঢ়াসক্ত হয়ে থাকলে (বুদ্ধ দমনের উপযুক্ত জন না হলে) নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি বলে। অথবা এ গুরুকর্ম মরণের পর নিশ্চত অপায়গতি হয় বলে নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি বলে।
০৬টি গুরুকর্ম থেকে পঞ্চান্তরিয় কর্মের সংঘভেদ হল ঘোরতর গুরুকর্ম। সংঘভেদ গুরুকর্ম চেয়ে নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি আরো বেশি ঘোরতর মারাত্মক কর্ম। সংঘভেদের কারণে অবীচি নরকে পরলে সে নরকায়ু শেষ হবার আগে কল্পধ্বংস হলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাব্যস্ত শেষ হয়।
কিন্তু নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টির কারণে অপায়ে পরে গেলে সে কল্পধ্বংস হলেও অন্যকল্পের নরকে গিয়ে অসহ্য দুঃখ ভোগ করতে হয়। নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি জনিত নরকের আয়ু নির্দিষ্ট নাই। যতকাল পর্যন্ত এ নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি ত্যাগ না করবে, ততকাল পর্যন্ত নরকের দুঃখ ভোগ করতে হয়। [অভিধর্ম ভাষাটীকা] অপ্রমাদ অমৃতপদ, প্রমাদ মৃতবৎ। নিজেই নিজের রক্ষাকর্তা। ধর্মচারী সাধুসজ্জনকে ধর্ম রক্ষা করে। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
দশবিধ দণ্ড কর্ম ও কর্মের বিপাকঃ
যাঁদের প্রতি অপরাধ কর্ম করলে কর্মের বিপাক ভোগ করতে হয়-
১। বুদ্ধ।
২। পচ্চেক বুদ্ধ।
৩। অগ্রশ্রাবক, মহাশ্রাবক।
৪। অরহত।
৫। মাতা।
৬। পিতা।
৭। আচার্য গুরু।
৮। শীল সমাধি প্রজ্ঞাবান আর্য সাধুসজ্জন।
৯। অহিতকারী, উপকারী।
১০। ধর্মকথিক।
কর্মের বিপাকঃ
১। মারাত্মক মাথা ব্যথা রোগ হয়।
২। ধন-সম্পদের ক্ষতি হয়।
৩। অঙ্গহানি হয়।
৪। চিকিৎসাহীন রোগ আক্রান্ত হয়।
৫। পাগল হয়।
৬। রাজ দণ্ডে দণ্ডিত হয়।
৭। মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।
৮। সাধু সজ্জনের সাক্ষাত হয় না।
৯। জ্ঞাতি হারা হয়।
১০। আগুনে পুড়ে।
তবে প্রাত্যহিক জীবনে সতর্ক থাকলে নির্বাণ অবধি এ কর্মের বিপাক থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ক্ষমা প্রার্থনাঃ
ভব-ভবে, জন্ম-জন্মান্তর থেকে এই মুহুর্ত পর্যন্ত ত্রিরত্নে ও মাতা-পিতা, গুরুজন সহ শীল সমাধি প্রজ্ঞা গুণে গুণীদেরকে হোক। উপকারীদেরকে হোক। জ্ঞাত অজ্ঞাতে হোক। উদ্দেশ্য করে বা না করে হোক। মনে থাকে বা না থাকে- তাঁদেরকে কায়িক, বাচনিক ও মানসিকভাবে যদি কোন পাপকর্ম করেও থাকি তা আজি সমস্ত দোষ স্বীকারের সহিত করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আমাকে মৈত্রীর সহিত ক্ষমা করুন যাতে করে নির্বাণ অবধি সকলকে সেবা উপকার করে দান-শীল-ভাবনা অনুশীলনের দ্বারা অন্তিমে পরম সুখ পরম শান্তি নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার সক্ষম হতে পারি। এই নৈষ্কর্ম্য সম্যক সঙ্কল্প করে প্রার্থনা করছি।
সবার মঙ্গল হোক।
সাধু-সাধু-সাধু।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
সাধুবাদ।
ReplyDelete