সংসার কেন দীর্ঘ হয় দেশনা।

সংসার কেন দীর্ঘ হয়? আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

সংসার কেন দীর্ঘ হয় আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।




সত্ত্বগণ কেন সংসার দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে না ? কেনবা তাদের সংসার এত দীর্ঘ হয়ে থাকে ?

আর্যসত্য চারটি রয়েছে। এ আর্যসত্যকে না জানার কারণেই সংসার দীর্ঘ হয়েছে। আর্যসত্যকে জানলে সংসার সংক্ষিপ্ত হয়, না জানলে সংসার দীর্ঘ হয় বলে মনে রাখা।

সংসার বিচরণকালে ছোট-বড়, বর্তুল-চেপ্টে, বেঁটে-লম্বা বিভিন্ন আকৃতি হয়ে মানুষ, দেব, ব্রহ্মা। তির্যকে- কুকুর, শুকর, কুঁড়া, পাখি, ইত্যাদিও হয়েছে। প্রেত, অসূর, নিরয়ে ঘুরেছে। সত্যকে না জানার কারণে ঘুরতে হয়েছে। আরো ঘুরতে হবে না তাও কোন গ্যারান্টি নেই।

ভিক্ষুগণ! সংসার বিচরণকালে সত্যকে না জেনে আমিও সেভাবেই ঘুরেছি। এবার সত্যকে জেনে বুদ্ধ হয়েছি। বুদ্ধ হয়ে সত্ত্বগণের মাঝে সত্যের কথা প্রকাশ করছি।

সত্যকে না জেনে বুদ্ধ তিনিও অতীতে বিভিন্ন জন্মে বিভিন্ন আকৃতি জন্ম ধারণ করে বিচরণ করেছিলেন। সত্ত্বাও এভাবেই বিচরণ করছে। সত্যকে জেনেছেন বলে তিনি বুদ্ধ হয়েছেন। তাই তাঁর সংসার বিচরণ চির অবসান হয়েছে এবং সত্ত্বগণেরও সংসার বিচরণ দুঃখ থেকে চির মুক্তির জন্যে সত্যকে প্রকাশ করে গেছেন।

সংসার দুঃখ থেকে মুক্ত হতে চাইলে তথা সংসারকে সংক্ষিপ্ত করতে চাইলে সত্যকে জানতে হয়, সত্যকে জানার জন্য বিদর্শন কাজ করতে হয়। বিদর্শন না করলে সত্যকে জানা যায় না। নিজে বিদর্শন না করে অন্যজনের বলার কথাকে সত্য সত্য আর্যসত্য বলে কোন সার্থক হবে না। অন্যজন আহার করলে নিজের পেট ভরে নাকি ?

বিদর্শন করলে সত্যকে স্বয়ংপ্রত্যক্ষ জানতে পারে। স্বয়ংপ্রত্যক্ষ জানার ফলে দুঃখের কারণ তৃষ্ণা ক্ষয় হয়। ০১টি দুঃখসত্য জানলে ০১টি তৃষ্ণা ক্ষয় হয় বলে মনে রাখা। অনুশ্রবন (অন্যের মুখের কথা শ্রবন) করে বা গ্রন্থপড়ে কাজ হবে না। যথাভূত মার্গজ্ঞানই কাজে আসবে। এটাই দরকার।

সত্যকে জানা বলতে অন্য কোথাও গিয়ে জানতে হবে তা নয়। সত্য নিজের দেহের ভেতর আছে। নিজের দেহের ভেতরে থাকা নাম-রূপের সত্যকে স্বয়ং উপলব্ধি করা। রূপের স্বভাবকে হোক, নাম (মনের স্বভাব)কে হোক যে কোনেটি উৎপন্ন হলে সেটিকে মার্গজ্ঞান দিয়ে “যথা পঞ্ঞায পস্সতি” যথা প্রজ্ঞার দ্বারা দর্শন করা তথা নাম-রূপের স্বভাবকে উদয়ব্যয় দর্শন করা, দর্শনের সক্ষম হলে সত্যকে জানার সম্ভব।
উদয়ব্যয় দর্শনের মাঝে অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ম দর্শনে সম্ভব হলে আর্যসত্যকে স্বয়ংপ্রত্যক্ষের সম্ভাব। অন্যজনের মুখের কথায় অসম্ভব। নাম-রূপ ধর্মতাকে মার্গজ্ঞান দিয়ে আর্যসত্যকে উপলব্ধি করা দরকার।

নিজের দেহ-মনের স্বভাবকে উদয়ব্যয় দর্শন করতেও জানে না। অমন না জানার ব্যক্তি নিজেকে ভালো মনে করে, পছন্দ করে, তারা নিজের থেকে আলাদা হতে চাই না, নিজের প্রতি দৃঢ়াসক্ত হয়। তাদের প্রজ্ঞা অভাব থাকে, এ অভাবের কারণে তারা সত্যকে দর্শন করতে অক্ষম। তাই সত্যকে দেখে না, জানে না। এজন্যে তারা তৃষ্ণাকে বন্ধুত্ব করে, এরা কখনো দুঃখের সাথে বুঝাপড়া হয়ে উঠে না। তৃষ্ণা দুঃখের কারণ। এ কারণই দুঃখচক্রকে ঘুরাই তথা সংসারকে দীর্ঘ করে। দেহ-মনকে ভালোলাগা তৃষ্ণা থাকলে “তণ্হা পচ্চযা উপাদানং, উপাদান পচ্চযা কম্মভবো”-
কায়কর্ম, বাক্যকর্ম, মনোকর্মের মুখোমুখি হয়। তারপর জন্ম-জরা-মরণ-শোক-পরিতাপ-কায়িক-মানসিক ও হতাশা প্রতিত্যসমুৎপাদ বিচরণ চক্র ঘুরে। তাই, তৃষ্ণাই- দুঃখের জনক। এ তৃষ্ণাই সংসারকে দীর্ঘকারী অভিযুক্ত আসামী বলে চিহ্নিত করে রাখা। চার আর্যসত্যকে না জানার কারণেই সংসার দীর্ঘ হয়েছে বলে জেনে রাখা। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-১৮ জুন ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।