ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা কেন বলা হয়।

ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা কেন বলা হয় ? সিদ্ধাত্থ তেলং সম্পর্কে মূল্যবান দেশনা করেছেন ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।  

date-23may2021.

ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা কেন বলা হয়।


Vesak Day. ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা কেন বলা হয়? "সিদ্ধাত্থ তেলং" রাজকুমারী হল পুরাণ দীপঙ্কর সম্যক সম্বুদ্ধের সৎবোন (Younger Step Sister) ইনিই ভাবী সিদ্ধার্থ গৌতম বোধিসত্ত্ব। 

ভাই বুদ্ধ গন্ধকুটির ও সংঘ নিবাসে প্রদীপ প্রজ্জ্বলের জন্য সংঘের উদ্দেশ্যে অষ্ট সমাপত্তি পঞ্চাভিজ্ঞান লাভী বোধিসত্ত্ব এক ব্রাহ্মণপুত্র ভিক্ষুকে সাদা সরিষা বীজের তেল পাত্রপূর্ণ দান পূর্বক রাজকুমারী বুদ্ধের অনুপ্রেরণা পেয়ে পুরুষত্ব প্রার্থনা করে ভাবী বুদ্ধ হওয়ার জন্য বর গ্রহণ করলে পরবর্তী জন্মে পুরুষ হয়ে- 

০৭ অসংখ্যেয় কল্পকাল ধরে মনে মনে বুদ্ধ হওয়ার জন্য দানাদি পুণ্য কর্ম সম্পাদন করেছিলেন ০১ লক্ষ ২৫ হাজার সম্যক সম্বুদ্ধের শাসনে- 

০৯ অসংখ্যেয় কল্পকাল ধরে বুদ্ধ হওয়া জন্যে বাচনিকভাবে (মনের উদ্দেশ্য প্রকাশ) দানাদি পুণ্য কর্ম সম্পাদন করেছিলেন ০৩ লক্ষ ৮৭ হাজার সম্যক সম্বুদ্ধের শাসনে- 

মোট ১৬ অসংখ্যেয় কল্পকাল ধরে ০৫ লক্ষ ১২ হাজার সম্যক সম্বুদ্ধের শাসনে দানাদি পুণ্যকর্ম করার পর ঐ ব্রাহ্মণপুত্র জগতে দীপঙ্কর নামে বুদ্ধ হলেন তখন সেই "সিদ্ধাত্থ তেলং" রাজকুমারী হয়েছিলেন বোধিসত্ত্ব সুমেধ তাপস। 

তাঁরা উভয়ে পুনঃ সাক্ষাত পেয়ে সুমেধ তাপস আবার নিয়ত বর গ্রহণ করে ০৪ অসংখ্য ০১ লক্ষ কল্পকাল ধরে ২৪ জন বুদ্ধের সাক্ষাত পেয়েছিলেন এবং পূরণ করে নিলেন ৩০ পারমী, পঞ্চ পরিত্যাগ, ত্রিচর্য, মোট ৫৫০ জন্ম গ্রহণে সর্বশেষ বেশান্তর রাজা জন্মের পর তুষিত স্বর্গে উৎপন্ন হয়ে স্বর্গের যথা আর্যুষ্কাল দিব্যসুখে অবস্থান করার পর স্বর্গ থেকে কপিলবস্তু শাক্য রাজ্যের অধিপতি মহারাজ শুদ্ধোধনের অগ্রমহিষী মায়াদেবী গর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করে ৬৮ মহাসালে লুম্বিনী কাননে জন্ম, ১০৩ মহাসালে বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ ও ১৪৮ মহাসালে একই বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। 

তাই এ দিনটিকে ত্রি স্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা বলা হয়।


তিনি এদিনে অশ্বত্থ বৃক্ষ মূলে সত্যক্রিয়া পূণ্য প্রভাবে স্বসৈন্য মারকে পরাজিত করে অরুণোদয়ের আগে বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেছিলেন তাই এই অশ্বত্থ বোধিবৃক্ষ মূল বৌদ্ধদের জন্য পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা একটি পুণ্যক্ষেত্র হয়ে আছে- 

বোধিবৃক্ষ মূলে পূর্ণিমা দিনে স্বসৈন্য মারকে জয় করেন।

চার আর্যসত্য জ্ঞান লাভ করেন। বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পবিত্রস্থান বোধিমূলে বুদ্ধের অনন্ত জ্ঞানের উদ্দেশ্যে বোধিমূলে জল সিঞ্চন করে থাকে। বস্তুতঃ বুদ্ধের অনন্ত জ্ঞানকে স্মরণ করে বোধিবৃক্ষ সঞ্জীবনীর জন্য জল সিঞ্চন করা হয়। 


বোধিবৃক্ষে জল সিঞ্চনের পুণ্যফলঃ 

অরহত গন্ধোদকিয স্থবিরের বর্ণনাঃ

৯১ কল্প পদুমুত্ত বুদ্ধের সময়ে এক গৃহী বোধিবৃক্ষ মূলে পুণ্যানুষ্ঠানের সময় পাত্রপূর্ণ সুগন্ধি চন্দন মিশ্রিত জল ঢেলে বুদ্ধের অনন্তগুণকে শ্রদ্ধা বন্দনা করেছিলেন। তখন প্রচুর বৃষ্টি পরছিল এবং বজ্রপাত হচ্ছিল বজ্রপাত পরে সেই মারা গিয়েছিল। 

বোধিবৃক্ষ মূলে চন্দনের জল ঢালার পূণ্য প্রভাবে শতস্তর বিশিষ্ট দিব্য বিমানে লক্ষ সেবিকা পরিষদ নিয়ে দেবগণের যথায়ুষ্কাল পর্যন্ত দিব্যসুখে সুখি হয়েছিলেন। 

এরুপ দিব্যসুখের পর মর্ত্যলোকে সপ্তরত্ন পূর্ণ বহু পরিষদ পরিবৃত্ত "সংবসিত" নামক চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলেন। 

অতঃপর গৌতম বুদ্ধের সময়ে এসে "গন্ধোদকিয" স্থবির নামক চার প্রতিসম্ভিদা, অষ্টবিমোক্ষ, ষড়াভিজ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এটি ওনার দেশিত দেশনার বর্ণনা। 


অরহত বোধিসিঞ্চক স্থবিরের বর্ণনাঃ

বিপস্সী বুদ্ধের সময়ে এক ভিক্ষু বোধিবৃক্ষ মূলে আয়োজিত পূণ্যানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সর্বদুঃখ দুঃখ মুক্ত বুদ্ধ আমাদেরকেও মুক্তির পথ দেখিয়ে উপকার করুক নৈষ্ক্রম্য সম্যক সঙ্কল্প করে ফুল মিশ্রিত সুগন্ধি জল ঢেলে বোধিবৃক্ষ মূলে এই পূণ্যকর্ম সম্পাদন করেছিলেন। 

এই পূণ্য প্রভাবে ৯১ কল্পকাল ধরে অপায় গতি না হয়ে দেব মর্ত্যলোকে বিচরণ করে ৩৩ কল্পকালে এসে মর্ত্যলোকে "উদকসেচন" নামক ০৮ বার চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলেন।

এই ভদ্রকল্পে গৌতম বুদ্ধের সময়ে এসে “বোধিসিঞ্চক স্থবির” নামে প্রতিসম্ভিদা, অষ্টবিমোক্ষ, ষড়াভিজ্ঞ জ্ঞান ক্ষীণাস্রব অরহত হন। এটি তাঁর দেশিত দেশনার বর্ণনাত। 

ইহ জীবনে যাঁরা বোধিবৃক্ষ চারা রোপণ, পরিচর্যা, বোধিবৃক্ষের নীচে ওয়াল নির্মাণ করে চতুর্দিকে ২৮ বুদ্ধ, চতুর্বুদ্ধ মুর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূণ্য করলে উপরোক্ত স্থবির ভন্তেদের ন্যায় সর্বদুঃখ হতে মুক্ত হতে পূণ্যবান হবেন। 

সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।


লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি।
সময়-সকাল ০৮:৫০ ঘটিকা 
তারিখ-২৩ মে ২০২১ইং। 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।