বুদ্ধের শ্রাবক সংঘের শিষ্য কেন এত ধর্মদেশনা দেয়।
বুদ্ধের শ্রাবক সংঘের শিষ্য কেন এত ধর্মদেশনা দেয় আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
কেউ জিজ্ঞেস করলো- কেন এত ধর্মীয় লেখালেখি পোষ্ট করে? কেন এত ধর্মালোচনা সভা করে? কেন এত ধর্মদেশনা করে? এ লেখালেখি, ধর্মালোচনা সভা, দেশনা করার উদ্দেশ্য কি?
বুদ্ধের সময়ে এক রাজকুমার বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। মনোযোগ দিয়ে ঐ ব্যক্তি ধর্মশ্রবন করছে কি করছেনা না জেনে আন্দাজে কাউকে জোর করে কেন এত ধর্মদেশনা করেন?
বুদ্ধ- যদি কেউ এরূপ জিজ্ঞেস করে, তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝিয়ে বলবেন?
বুদ্ধ বললেন- রাজকুমার তোমার পুত্র-কন্যা আছে কি?
একজন বাচ্চা সন্তান আছে।
বুদ্ধ রাজকুমারকে আবার জিজ্ঞেস করলেন-
সেই অবোধ সন্তান যদি চাঁড়াভাঙা খেয়ে ফেলে তখন এভাবে দেখে থাকবে? নাকি জোর করে ভাঙা টুকরোকে বের করবে? বুদ্ধ! চাঁড়াভাঙা পেটের ভেতর পরে গেলে বাচ্চা মরে যাবে তাই জোর করে বের করে ফেলতে হবে বললেন।
তখন বুদ্ধ বললেন- মুখ থেকে রক্ত বের হবে না? বুদ্ধ! সন্তানের মুখ থেকে রক্ত বের হবে ঠিক তবে মরবে না।
বুদ্ধ! চাঁড়াভাঙা পেটের ভেতরে পরে গেলে নিশ্চিত মরবে, তাই পেটের ভেতরে পরে যাওয়ার আগে বাচ্চাকে চেপে ধরে জোর করে বের করে ফেলতেই হবে বললে-
বুদ্ধ রাজকুমারকে পুনর্বার বললেন- হ্যাঁ আমিও সত্ত্বগণকে অত্যন্ত দয়া করুণা করার কারণে, অপায়ে পরে যেতে পারে জেনে, সত্ত্বগণের মুখের ভেতর লোভ-দ্বেষ-মোহকে বের করে ফেলার জন্য আমিও মার্গের ঔষধ জোর করে খাইয়ে দিয়ে লোভ-দ্বেষ- মোহকে বমি করে ফেলে দেওয়ার জন্য, ধর্মোপদেশ করি বলে বুঝিয়ে দিলেন।
রাজকুমার ধর্মোপদেশ শ্রবণ করে মৈত্রী মহাকরুণাকে বুঝতে পেরে সন্তষ্ট হলো।
বুদ্ধের মৈত্রী মহাকরুণার সমকক্ষ এ জগতে কেউই নেই। তাঁর মত করে ধর্মকে বুঝিয়ে দিতে পারি না। তবুও বর্তমান সময়ে তাঁর শ্রাবক সংঘের সদস্য ভিক্ষু হয়ে চাঁড়াভাঙ্গা খেয়ে থাকা সত্ত্বের অপায়গতি যেন না হতে পারে, মৈত্রীর সহিত ফেসবুকের মাধ্যমে বুদ্ধের মার্গঔষধ লেখালেখি দেশনা উপকার করে থাকি।
কেন ধর্মোপদেশ করে? দুর্গতি হবার আশঙ্কা রয়েছে বলে। সত্ত্বদের মনের পাপকে কি দিয়ে মোচন করবে? কুশলকর্ম দিয়ে মোচন করতে হবে। সেটি কোন ধরণ কুশলকর্ম ?
কুশলকূম ৪-প্রকার-
(১) দান- ত্যাগ, পরিত্যাগ কুশলকর্ম।
(২) শীল- বারিত্র শীলাচরণ কুশলকর্ম।
(৩) সমথ- ধ্যান কুশলকর্ম।
(৪) বিদর্শন- নাম-রূপের লক্ষণ দর্শন মার্গ অনুশীলন কুশলকর্ম।
দান কুশলকর্ম পাপ মোচনের অসম্ভব। শীলের কুশলকর্মও নিরাপত্তা দিতে পারে না। সমথ কুশলকর্মও গন্তব্যের পথ শেষ হয় না। কেবল বিদর্শন কুশলকর্মই অপায়গতি বন্ধের সম্ভব। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
অকৃতজ্ঞ মানুষের ১১টি কুফল।
১। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়।
২। দরিদ্র হয়।
৩। বসতঘর ক্ষতি হয়।
৪। কুষ্ঠরোগ হয়।
৫। অঙ্গহানি হয়।
৬। মতিভ্রম হয়।
৭। রাজ দণ্ডে দণ্ডিত হয়।
৮। মিথ্যা অভিযুক্ত হয়।
৯। জ্ঞাতি হারায়।
১০। ধন-সম্পদ হারায়।
১১। মরণের পর অপায়গতি হয়।
এ ১১টি অকৃতজ্ঞদের কুফল বলে জানিও।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।তারিখ-২৮ জুন ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment