ফেসবুকে কেমন পোস্ট করা উচিৎ নয়।

ফেসবুকে কেমন পোস্ট করা উচিৎ নয় ?


ফেসবুকে কেমন পোস্ট করা উচিৎ নয় ?

















আজকাল নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ কমবেশি সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। কারো ফেসবুক আইডি না থাকলে সে যেন বর্তমান সমাজে অচল। অনেকে সন্তান হওয়ার সাথে সাথে সদ্যজাত সন্তানের নামে ছবি সহ একটি ফেসবুক আইডি খুলে রাখে।

মাতা/পিতা, বন্ধু-বান্ধব ও আশপাশের লোকজনের দেখা-দেখি ১০/১২ বছরের ছেলে/মেয়েরাও বর্তমানে ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করছে। প্রতিনিয়ত কোথায় যাচ্ছে, কার কার সাথে মিশছে, কি খাচ্ছে, বন্ধুদের সাথে কি হচ্ছে, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে পোস্ট/ কমেন্টের মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনা করছে।

সমস্যা হলো নাবালক ও সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছুতে ভুল করে বসে। তার কারণ তাদের বাহ্যিক জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত নয়। যেখানে বহু সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রে বসবাস করে, যেখানে বহু দল, মত ও বিশ্বাসের লোকজন বসবাস করে সেখানে মন চাইলে কারোদ্বারা তাড়িত হয়ে বা অনলাইনে ভাল-মন্দ কোন কিছু দেখে উত্তেজনা বশত যেনতেন কিছু লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমেন্ট ও শেয়ার করা উচিৎ নয়। কারণ এসব উত্তেজনা বশত দু'লাইন অযাচিত লিখার মাশুল দিতে হয় নিজ সম্প্রদায়ের নিরিহ জনসাধারণকে/নিজ পরিবারকে/সর্বশেষ নিজেকে।


বর্তমান সময়ে ফেসবুকে ফেইক/ভুয়া আইডিধারী লোকজনের অভাব নেই। ফেইক আইডিধারী ফেসবুক ব্যবহারকারী বিভিন্ন উষ্কানীমূলক/ বিভ্রান্তি মূলক পোস্ট শেয়ার করে থাকে এবং বিভিন্ন নামে বেনামে ফেসবুক গ্রুপ/পেইজেরও ছড়াছড়ি লক্ষ্যণীয়। এসব ফেসবুক ফেইক আইডি ও গ্রুপ/পেইজের উষ্কানীমূলক পোষ্ট দেখে আগপিছ না ভেবে অনেকে অযাচিত কিছু পোস্ট করে ফেলে এবং তা শেয়ারও করে দেয়। মনে রাখবেন, এসব অনৈতিক পোস্টের কারনে দেশের প্রচলিত আইনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে।


সামান্য ফেসবুক ব্যবহারের জন্য কেন আইনের আওতায় শাস্তি ভোগ করবেন? তাই সবসময় নিজেকে সংযত রাখা উচিৎ।  স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে, ভেবে-চিন্তে কাজ করাই উত্তম মঙ্গল। 


এই বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী।  সন্তান বড় হওয়ার সাথে তাকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া অভিভাবককের উপর বর্তায়। কারো ছেলে/মেয়ে কিংবা পরিবারের কারোদ্বারা অনৈতিক কিছুর কারণে নিরিহ লোকজন ভয়ানক পরিনতির স্বীকার হতে হচ্ছে। সব পরিবারের ছেলে/মেয়েকে সমাজের প্রত্যেকে হয়তো চিনে না।  সমাজের ২/৪ জন বিশিষ্ট জন ছাড়া সমাজের সকল পরিবারের ছেলে/মেয়েকে সবার চিনারও কথা না। 


বর্তমান যান্ত্রিক সময়ে নিজের কাজের ব্যস্ততার জন্য নিজের পরিবারকে যেখানে পর্যাপ্ত সময় দেয়া যায় না, সেখানে কে কি করল বা কে কার ছেলে/মেয়ে কোনটা তা দেখার সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। যখনই অঘটন ঘটে তখই সমাজের মানুষ জানতে পারে অমুকের ছেলে/মেয়ের অযাচিত ফেসবুক ব্যবহারের কারনে তারা আজ চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।  


ফেসবুক ব্যবহার না করলে কিছু আসে যায় না, তবে কারো অযাচিত ফেসবুকের ব্যবহার বহুমানুষকে নিঃস্ব করে। তাই বর্তমান সময়ে ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী। যারা অযাচিত পোস্ট শেয়ার করে তাদের আনফ্রেন্ড করা বুদ্ধিমানের কাজ।


ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে মানহানিকর অনৈতিক কিছু পোস্ট করে বা মানহানিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার করে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিৎ নয়। 


বর্তমান সময়ে এক মায়ের গর্ভের ভাই, ভাইয়ের জন্য এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় দেয় না। তবে কেন সমাজের একজনের ভুলের খেসারত তার কমিউনিটির বা সম্প্রদায়ের সকলকে নিতে হবে ? 


সমাজ/সম্প্রদায় কখনো সমাজে বসবাসকারী কারো পরিবারের সন্তানকে খারাপ কিছু শিক্ষা দেয় না এবং কেউ খারাপ কিছু করলে তা সমর্থনও করে না। 


বর্তমান সময়ের অনেক ছেলে/মেয়ে সমাজ কি? 

সমাজের প্রয়োজন কি ? 

সামাজিক মূল্যবোধ কি ? 

ইত্যাদি বিষয়ে তেমন ধ্যন ধারণা নেই। তার কারণ হলো অতিমাত্রিক আধুনিকতার জোয়ারে অভিভাবক সন্তানকে সেই নৈতিক শিক্ষাটুকু দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।  

 

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও এদেশে হাজার বছর ধরে বহু ধর্মের লোক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে চলেছে।  ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে কিংবা কারো ব্যক্তিগত মতাদর্শের কারণে সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি যেন বিনষ্ট না হয় সেই দিকে সকল ধর্মের লোকদের সচেতন থাকতে হবে। 


ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। সংঘাত নয়, মৈত্রী দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। এই জীবন ক্ষনস্থায়ী। যে যেই ধর্মের অনুসারী লোক হোক না কেন সবার জন্ম একই নিয়মে হয়েছে বা হচ্ছে এবং একদিন সবাইকে একই নিয়মে চলে যেতে হবে বা হচ্ছে। যাইহোক ফেসবুকে কাউকে হেয় করে, মানহানিকর, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 


যারা অবুজ তাদের অভিভাবককে দায়িত্ব নিতে হবে এবং কি করা উচিৎ-কি করা উচিৎ নয়, কোনটা নৈতিক কোনটা অনৈতিক ইত্যাদি বিষয়গুলি বুঝাতে হবে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ভুল করে না বসে।


আমার দৃষ্টিতে ফেসবুকে পোস্ট করার সময় কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী :-

  • সার্বভৌম রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে কুৎসা রটনামূলক পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত কারো বিরুদ্ধে মানহানিকর পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • কারো ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসে আঘাত হানে এবং কারো ধর্মীয় প্রধান সম্পর্কে মানহানিকর পোস্ট/কমেন্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
  • কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
  • কারো অশ্লীল ছবি/ভিডিও ধারণ করে মানহানিকর পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
  • কোন গুজব রটনামূলক পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।   
  • সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক পোষ্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
  • সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে গুজব রটনা মূলক পোস্ট করা, ছবি/ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 


একটি প্রশ্ন- ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনৈতিক, অশ্লীল ও মানহানিকর পোস্ট করলে তার বিরুদ্ধে আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে কি ?


উত্তর- হ্যাঁ আছে। কেউ ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো ধর্মীয় বা অন্যান্য চেতনা ও বিশ্বাসহানিকর, ব্যক্তির মানহানিকর, উষ্কানিমূলক কিংবা কারো অশ্লীল ছবি/ভিডিও সম্বলিত পোস্ট করলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। 


প্রয়োজনে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সহ বিভিন্ন আইন পড়ে দেখতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনেও বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় এসব আইনগুলি পাওয়া যায়।  


বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। আধুনিক সভ্যতার কল্যাণে প্রাপ্ত প্রযুক্তিকে ভাল কাজের পাশাপাশি খারাপ কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। মূল কথা হল এটি ব্যবহারকারীর উপর নির্ভরশীল। বর্তমান সময়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে একজনের বদলে অন্যজনের ছবি বা ভিডিও পরিবর্তন করা যাচ্ছে।  


একজনের ফেসবুক বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম হ্যাক করে কিংবা এক জনের নামে অন্যজন ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে বিভিন্ন রকম সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই হুট করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে নিকটস্থ থানা পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করুন।


দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান, বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিৎ নয়। কোন সমস্যা হলে তার সমাধানও আছে। কারো ভ্রান্ত কথায় উত্তেজিত হয়ে কারো ক্ষতিসাধন করা ঠিক নয়। 

কেউ কারো ক্ষতি করার জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষনিকভাবে মোবাইল ফোনে নিকটস্থ থানায় বিষয়টি অবগত করুন কিংবা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে অবগত করুন।


এই ধরণের সমস্যায় নিজের বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং নিজেকে সংযত থাকতে হবে -

  • কেউ আপনাকে কারো ক্ষতি করার জন্য প্ররোচিত করার মাঝে প্ররোচনাকারীর ব্যক্তিগত স্বার্থ লুকায়িত আছে কিনা ? 
  • প্ররোচনাকারী কর্তৃক যাকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে সেই ব্যক্তি আসলে দোষী কিনা ? 
  • নিজের স্বার্থে আপনার বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্ররোচনাকারীর স্বার্থে আপনাকে ব্যবহার করতে চাইছে কিনা ? 
  • কারো কথায় বা গুজবে কান দেওয়ার ফলে নিরীহ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে কিনা ? 


আসুন মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এই চেতনাকে জাগ্রত করি। গুজবে কান না দিই এবং কারো ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসকে অশ্রদ্ধা না করি। সবাই মিলেমিশে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিই। 


নশ্বর পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়। সবাইকে একদিন একই নিয়মে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে চলে যেতে হবে। আসুন লোভ, হিংসা, হানাহানি ভুলে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করি। সর্বোপরি সংযত জীবন যাপন করি। 

ধন্যবাদ। 


আরো দেখুন- ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যায় পড়লে কি করবেন।

এবং ফেসবুকে পরিচয়ের পর অপহরণ ও মুক্তিপন আদায়। 

 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।