কখন পচ্চেক বুদ্ধ উৎপন্ন হন।

কখন পচ্চেক বুদ্ধ উৎপন্ন হন? দেশনা করেছেন ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

কখন পচ্চেক বুদ্ধ উৎপন্ন হন


শূণ্য কল্পকালেই পচ্চেক বুদ্ধ উৎপন্ন হয়। এক বুদ্ধ পরিনির্বাণের পর থেকে আরেক বুদ্ধ উৎপন্নের মধ্যবর্তী সময়ে পচ্চেক বুদ্ধ উৎপন্ন হয়।

গৌতম বোধিসত্ত্ব জন্মের সময় একজন পচ্চেক বুদ্ধ জীবিত ছিলেন। তিনি হলেন- মাতঙ্গ পচ্চেক বুদ্ধ। বোধিসত্ত্ব জন্ম হয়েছে শুনে পরিনির্বাণ লাভ করলেন।

বুদ্ধের সাথে পচ্চেক বুদ্ধ সাক্ষাত হয়েছে এমন কখনো হয় না। পচ্চেক বুদ্ধ কখনো কারো শিষ্য হয় না। চার আর্যসত্যকে গুরুবিনে স্বয়ং প্রত্যক্ষ করে পরিনির্বাণ লাভ করেন।

পচ্চেক বুদ্ধ মানে প্রত্যেক বা নিজেই নিজের ধর্ম, নিজেই নিজের পথে পথিক হয়ে বুদ্ধ হন। কারো নিকট থেকে শিখেন না বলে পচ্চেক বুদ্ধ (প্রত্যেক বুদ্ধ)। পচ্চেক বুদ্ধ একসাথে ৫০০ জনও উৎপন্ন হয়, ততোধিকও উৎপন্ন হতে পারে।

সম্যক সম্বুদ্ধ কেবল একজনই উৎপন্ন হন। দুইজন উৎপন্ন হন না। কেবল একটি বুদ্ধের ধাতু বিদ্যমান থাকলেও পরবর্তী সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হন না। দরুন গৌতম বুদ্ধ ধাতু থাকলে আর্যমিত্র বুদ্ধ উৎপন্ন হবেন না।

বুদ্ধের শাসন তিরোধান হয়ে গেলে ধর্মতঃ কাউকে শ্রদ্ধা করার মত কেউ থাকবে না। বুদ্ধ বলে জানার মত কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট না থাকার কালে এ ধাতুগুলো যেখানে প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকুক লঙ্কাদ্বীপে মহাচৈত্যে গিয়ে একত্রিত হবে।

সেই মহাচৈত্য থেকে সমস্ত ধাতু বুদ্ধগয়া মহাবোধিদ্রুম মূলে একত্রিত হয়ে বুদ্ধরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ঋদ্ধি প্রদর্শন করবেন। তাপর সমস্ত ধাতু তেজস্ক্রিয় হয়ে তিরোধান হয়ে যাবে এটিকে “ধাতু অন্তরধান” বা নির্বাণ বলে।

তাই এক বুদ্ধের ধাতু আরেক বুদ্ধের সময় পর্যন্ত থাকার নিয়ম নাই। কোন বুদ্ধের ধাতু বিদ্যমান থেকেই থাকলে পরবর্তী বুদ্ধ উৎপন্ন হন না।

ধর্মকে যিনি শেয়ার করেন তিনি প্রাপ্তি ধর্মদাতা হন। সকলেই সুখি হোক।

বোধিজ্ঞান লাভের বরঃ

তিনটি বোধিজ্ঞান লাভের বরঃ

১। সম্যকসম্বুদ্ধ বর- সর্বজ্ঞ বুদ্ধ হবার প্রার্থনা।
২। পচ্চেকবুদ্ধ বর-বুদ্ধান্তর কল্পকালে উৎপন্ন প্রত্যেকবুদ্ধ হবার প্রার্থনা।
৩। শ্রাবক বর- সম্যকসম্বুদ্ধের শ্রাবক হবার প্রার্থনা (অগ্রশ্রাবক, মহাশ্রাবক)।

০৫টি নিয়ত বর লাভ করতে হলে-

১। মনুষ্য হতে হয়।
২। পুরুষ হতে হয়।
৩। বুদ্ধ, পচ্চেক বুদ্ধ, সম্যক বুদ্ধের শ্রাবকের যে কোন একজনের সাক্ষাত হতে হয়।
৪। বুদ্ধের নিকট জীবনদান এমন পুণ্য থাকতে হয়।
৫। বুদ্ধ হবার ছন্দপ্রধান থাকতে হয়।

সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প কি ?

এ দেহ সমষ্টিতে সম্যক দৃষ্টি সম্যক সংকল্প না থাকলে কঠিন কষ্ট ভোগ করতে হয়।
সম্যক দৃষ্টি সম্যক সংকল্প ছাড়া কখনো হিত সুখ মঙ্গল হয় না।
নির্বাণ অবধি হিত সুখ মঙ্গলের জন্য নৈর্বাণিক নৈষ্ক্রম্য সম্যক সংকল্প সম্মত অসংস্কার/ সসংস্কার দান, শীল, ভাবনা কর্ম করতে হয়।

সম্যক দৃষ্টি ০৫ প্রকারঃ

১। কর্মস্বকীয়তা সম্যকদৃষ্টি।
২। ধ্যান সম্পর্কিত সম্যকদৃষ্টি।
৩। বিদর্শন সম্পর্কিত সম্যকদৃষ্টি।
৪। মার্গ সম্পর্কিত সম্যকদৃষ্টি।
৫। ফল সম্পর্কিত সম্যকদৃষ্টি।

১। কর্মস্বকীয়তা সম্যক দৃষ্টিঃ

পাপকর্ম করলে পাপের ফল। পুণ্যকর্ম করলে পুণ্যের ফল হয়। কর্ম কর্মফলকে জানা বুঝাটা সম্যক দৃষ্টি। তবে সম্যক দৃষ্টি হলেও “ভব পচ্চযো জাতি-ভবের কারণে জন্ম” এ কর্মস্বকীয়তা সম্যক দৃষ্টি বর্তদুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে না। এ সম্যক দৃষ্টি সদ্ধর্মের বাহিরেও থাকে।

২। ধ্যান সম্পর্কিত সম্যক দৃষ্টিঃ

এ ধ্যান পথবী, আপো, বাযো, তেজো ইত্যাদিকে ভাবনা করে প্রাপ্ত ধ্যানের সম্যক দৃষ্টি। সেই তো রূপ অরূপ ব্রহ্মালোকে উৎপন্ন হবে “ভব পচ্চযো জাতি-ভবের কারণে জন্ম” সেইও বর্তদুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারে না। এ সম্যক দৃষ্টিও সদ্ধর্মের বাহিরে থাকে। ৩১টি লোকভূমির জরা, ব্যাধি, মরণ গর্তের থেকে মুক্ত নয়।

৩। বিদর্শন সম্যক দৃষ্টিঃ

সম্যক সম্বুদ্ধের শাসন সদ্ধর্মের উৎপন্ন মার্গানুশীলন সম্যক দৃষ্টি। বিশেষভাবে দর্শন এ বিদর্শনের দ্বারা চেষ্টা করলে নির্বাণ অবধি সুফল প্রদান করবে। এ সম্যক দৃষ্টিই অতীব দুর্লভ গুরুত্বপূর্ণ।

৪। মার্গ সম্যক দৃষ্টিঃ

বিদর্শন সম্যকদৃষ্টি অনুৃশীলনের এ মার্গ সম্যক দৃষ্টি উৎপন্ন হয়। মার্গ সম্যক দৃষ্টি কর্মবর্তকে ছিন্ন করে দিলে বিপাকবর্তও আর আসে না। সমুদয়কে প্রহান করে দিলে দুঃখ আসে না। কারণকে ছিন্ন করে দিলে ফল উৎপন্ন হয় না।

৫। ফল সম্যক দৃষ্টিঃ

বিদর্শন সম্যকদৃষ্টি, মার্গ সম্যকদৃষ্টি এ দুয়ের ফলশ্রুতিতে নির্বাণকে প্রত্যক্ষ করার সম্যক দৃষ্টি। ফল সমাপত্তি ধ্যানে মগ্ন সাধক ০৭ দিন পর্যন্ত নিমগ্ন থাকতে পারে। নির্বাণকে প্রত্যক্ষ করার জ্ঞানই হয়ে থাকে। এখানে অরহতের ফল জ্ঞান হলে “ভব নিরোধা জাতি নিরোধো” ভব নিরোধে জন্ম নিরোধ হয়ে অসংস্কৃত নির্বানে নিবৃত হন।

সম্যক সংকল্প ০৩ প্রকারঃ

১। নৈষ্ক্রম্য সংকল্প-

বর্ণ-শব্দ-গন্ধ-রস-স্পর্শ পঞ্চকাম, পঞ্চস্কন্ধ নাম-রূপ সমষ্টিতে কামনা-বাসনা-তৃষ্ণা-আসক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া অলোভ ধর্ম আছে। সেই অলোভ ধর্মের সাথে যুক্ত সঙ্কল্পকে নৈষ্ক্রম্যসঙ্কল্প বলে।

২। অব্যাপাদ সংকল্প-

সকল সত্ত্বগণের প্রতি হিত-সুখ-মঙ্গলের মৈত্রী আছে। সেই মৈত্রী ধর্মের সাথে যুক্ত সঙ্কল্পটা অব্যাপাদ সঙ্কল্প।

৩। অবিহিংসা সংকল্প-

সকল দুঃখী সত্ত্বদের প্রতি দয়া করার করুণা থাকে। সেই করুণার সাথে যুক্ত সঙ্কল্পই অবিহিংসা সঙ্কল্প।

সহজ ব্যাখাাঃ

১। নৈষ্ক্রম্য সঙ্কল্প- দুঃখ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নৈষ্ক্রম্য সঙ্কল্প।
২। অব্যাপাদ সঙ্কল্প- কাউকে তিল যৎ সামান্যও ক্ষতি না করার সঙ্কল্প।
৩। অবিহংসা সঙ্কল্প- যৎ সামান্যও অপকার না করার সঙ্কল্প।

#সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি।
তারিখ-০৬জুন২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।