মৃত্যুর পর অপায় গতি হতে পারে কি।

আমি মারা গেলে অপায় গতি হতে পারে কি? দেশনায় ভদন্ত  পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

 

আমি মারা গেলে অপায় গতি হতে পারে কি


আমি মারা গেলে অপায়গতি হতে পারে কি? কেন এ চিন্তা করে? 

যত চৈত্য (জাদি) প্রতিষ্ঠা করুক, যত বিহার বিহার করুক, আরো সোজা করে বলি- যত ধ্যান ঋদ্ধি লাভ করুক অন্ততঃ স্রোতাপত্তি না হলে বিনিপাতিক ভয় থেকে মুক্ত নয়। বিনিপাতিক ভয় হলে মরণের পর কোন গতি হয় ঠিক নাই। 

যেবা মরণ হোক না পৃথকজন মরণটি বিনিপাতিকের বাহিরে নয়। তাহলে এত দানকর্ম অনর্থক নয় কি? 

না, দানকর্মকে নিরুতসাহ করছি না, সত্যেকে জ্ঞাত হয়ে দান করার কথা বলছি, যেমনটা অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীর মত। 

আনন্দ করতে বারণ করছি না, শিশু সুলভ আনন্দ করা ইচ্ছা থাকে তবে সত্যকে জ্ঞাত হয়ে আনন্দ করলে ক্ষতি নেই। 

সত্যকে জ্ঞাত না হয়ে দান করলে সম্রাট অশোকের মত হতে পারে, অশোক রাজার তার বিনিপাতিক ভয় ছিল বলে অপায় গতি হল। 

মরণের আগে জ্ঞান উৎপন্ন হলে আর বিনিপাতিক ভয় থাকে না। কত অসংখ্য বুদ্ধ উৎপন্ন হয়ে গেলো, একজন বুদ্ধ উৎপন্নের হওয়ার জন্য যে পারমী পূরণ করতে হয় হিসেব করে দেখলে সবচেয়ে কম চার অসংখ্য ০১ লক্ষ কল্প আর সবচেয়ে বেশি ১৬ অসংখ্য কল্পকাল। 

নিজেদের মত করে চিন্তা করে, নিজেকে আমি কত কল্পকাল ধরে এ সংসারে বিচরণ করেছি ! 

বিচরণকালে একবারো কি “উদয়ব্যয় বিদর্শন” করিনি ? 

এত দুর্ভাগ্য পোড়া কপাল কিভাবে হলো যে এত দীর্ঘকাল সংসার বিচরণ কালে একবারো “উদয়ব্যয়” দর্শন করিনি।  

বুদ্ধ উৎপন্নের সময়ে যাঁরা বুদ্ধের দেশনা শ্রবন করে মুক্ত হয়েছিলেন তাঁরা সংসারে বিচরণ কালে অন্ততঃ কোন এক বুদ্ধের শাসনে একবার হলেও “উদয়ব্যয়” ধর্মদেশনা শ্রবন করেছিলেন। 

যাদের উদয়ব্যয়কে বুঝার হেতু থাকে তাদেরকেই বুদ্ধ মুক্তির পথ দেখিয়ে থাকেন। যাদের উদয়ব্যয় দর্শনে হেতু নাই তাদেরকে বুদ্ধ দেখেন না। 

বুদ্ধ উৎপন্ন সময়ে অষ্ট অক্ষণ পরে থাকলে তাদেরকে বুদ্ধ কিভাবে পথ দেখাবে ? 

এ কারণেই সদ্ধর্ম শ্রবন করা অতি দুর্লভ বলেছিলেন। এজন্যে বলতে হয় মরণের আগে জ্ঞান উদয় হোক এরুপ ভাবনা করা। 


কুড়ি হাজার বছর ধরে শীল রক্ষা-

 
অপায় দুর্গতি প্রাপ্ত কোন এক অজ্ঞ ব্যক্তি পুনরায় মানব জন্ম লাভ করার সহজে সম্ভব হয়ে উঠে না । মর্ত্যলোকে পুনজন্ম গ্রহণ করবে এ কথা কল্পনাতীত।
তাই বুদ্ধ বলেছিলেন- "কিচ্ছো মনুস্স পটিলাভো" মনুষ্য জন্ম লাভ দুর্লভ। বুদ্ধ 'এরকপত্ত' নাগরাজ উদ্দেশ্যে এ দেশনা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

এ নাগরাজ কাশ্যপ সম্যক সম্বুদ্ধের সময়ে কুড়ি হাজার বছর ধরে অরণ্যের ভিক্ষুত্ব ব্রহ্মচর্য আচরণকারী মহাস্থবির ছিলেন।

এত দীর্ঘদিন ভিক্ষুর ব্রহ্মচর্য ধর্ম আচরণের সত্ত্বেও ধ্যান মার্গ লাভ না করে অপায় গতি হবার কারন হল পূর্বে সে অল্প বয়সকালে নৌকা করে নদীর স্রোতে যাবার সময় নদীর পারে ওঠার কচুপত্র চটান পাচিত্তিয আপত্তিতে কৌকৃত্য নীবরণ উৎপন্ন হয়ে মারা যাবার পর তির্যক নাগকুলে জন্ম হয়েছিল।

[কচুপত্র চটানের কারনে তির্যক হয় নাই। অবহেলা বশত দীর্ঘবছরের প্রতিকার না করার আপত্তিকে মরণ মুহুর্তে প্রতিকার (দোষস্বীকার) করার মত ভিক্ষু না পেয়ে- ওহো! আমার তো আপত্তি দেশনা করা হয়নি আপত্তি গ্রস্ত অপরিশুদ্ধ হয়ে মরতে হবে এরূপ অশান্ত কৌকৃত্য চিত্তের কারনে তির্যক নাগকুলে জন্ম হয়েছিল]।

সেই মহাস্থবির নাগকুলে জন্মের পর থেকে কোন সুখ শান্তি না পেয়ে পুনর্বার মর্ত্য লোকে জন্ম নেওয়ার ইচ্ছা দুইজন সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন অন্তর কল্পকাল পর্যন্ত বিফল হতে হলো।

দু'জন সম্যক সম্বুদ্ধের অন্তর কল্পকাল বলতে গণনা করা অত্যন্ত কঠিন। কাশ্যপ বুদ্ধের কুড়ি হাজার বছর পর থেকে প্রতি ১০০ বছরে এক বছর করে কমে এসে মানুষের গড়ায়ু ১০ বছরে পৌঁছে।

আবার ১০ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের গড়ায়ু অসংখ্যেয়তে পৌঁছে। সেই অসংখ্যেয় গড়ায়ু থেকে নেমে ১০০ বছরে পৌঁছলে জগতে গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হন।

এ দীর্ঘ কল্পকালে মহাস্থবির নাগকুলে জন্মের পর থেকে ধর্মশ্রবন এবং বুদ্ধের দর্শনের কোন সুযোগ হয় নাই। গৌতম বুদ্ধের সাক্ষাতেই সেই এ দুটো সুযোগ পেলো। বুদ্ধের সমক্ষে তার নিবেদন খুবই করুণ। বুদ্ধ! আমি আপনার মত একজন কাশ্যপ সম্যক সম্বুদ্ধের শিষ্য মহাস্থবির ছিলাম। কুড়ি হাজার বছর ধরে ভিক্ষুত্ব ব্রহ্মচর্য আচরণ করেছিলাম।

সেই ব্রহ্মচর্য আচরণ আমাকে অপায় থেকে রক্ষা করতে পারে নাই। কচুপত্র ছেড়ার সামান্য ক্ষুদ্র আপত্তির দোষে অহেতুক প্রতিসন্ধি তির্যক নাগকুলে জন্ম নিয়েছি।

দু'জন বুদ্ধের অন্তরকল্প সেই দীর্ঘকালে মনুষ্য জন্ম লাভ করতে পারি নাই। ধর্মশ্রবনের সুযোগ হয় নাই। বুদ্ধের দর্শন সুযোহ হয় নাই বলে নিবেদন করেছিলেন।

এ নিবেদনকে ভিত্তি করে বুদ্ধ বলেছিলেন- “মনুষ্য জন্ম লাভ দুর্লভ। সত্ত্বগণের দীর্ঘায়ু লাভ দুর্লভ। সাধুসজ্জনের ধর্মশ্রবন অতি দুর্লভ। বুদ্ধ উৎপন্ন দুর্লভ” বলে দেশনা প্রদান করেছিলেন।

তখন তার সাথে ধর্মশ্রবন করার উত্তরমানব সহ স্রোতারা বিমুক্তি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। নাগরাজ স্বয়ংবুদ্ধের দর্শন, ধর্মশ্রবনের সুযোগ হলেও অহেতুক তির্যক হবার কারনে বিমুক্তি জ্ঞান লাভ করতে পারে নাই। তবে নাগকুলে নিরাপদে থাকা পঞ্চফল পেলো।

ইহা নাগরাজের করুণ পরিণতি। ভবিষ্যতে আরো কত কল্পকাল পর্যন্ত তাকে অপায়ে ডুবে থাকবে তা বলার কঠিন।

এ নাগরাজের মত দুঃখজনক করুণ কাহিনী যেন কারো না হতে হয় সেদিকে খেয়াল রেখে বা অপ্রমাদে শীলসমূহ পূর্ণ করে অপায়ের গতি বন্ধ করার উচ্চতর মার্গ-ফলজ্ঞান লাভ করতে পারলে নিজের জন্য হিত সুখকর হবে।

অপরিশুদ্ধ শীল নিয়ে কর্মস্থান ভাবনা যতই করুক না বালুচরে জল ঢালানোর সদৃশ। বালুচরে যতই জল ঢালুক কখনো জমে থাকবে না


সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

#সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি।
তারিখ-০৬জুন২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।