বুদ্ধক্ষেত্র কি।
বুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে মূল্যবান দেশনা করেছেন ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
বুদ্ধের ক্ষেত্র ০৩টি-
১। জন্মক্ষেত্র,
২। আজ্ঞাক্ষেত্র এবং
৩। বিষয়ক্ষেত্র।
জন্মক্ষেত্র-১০ সহস্র চক্রবালঃ
সিদ্ধার্থ গৌতম ভূমিষ্ঠকালে ১০-সহস্র চক্রবাল প্রকম্পিত হয়েছিল।
আজ্ঞাক্ষেত্র- ১ লক্ষ কোটি চক্রবালঃ
বুদ্ধ- রত্নসূত্র, খন্ড সূত্র, ধজাগ্র সূত্র, আটানাটিয সূত্র, মোর সূত্র পরিত্রাণ গুণের অনুভবে কোটি শত সহস্র চক্রবাল বিস্তৃতি জুড়ে এক সাথে কম্পিত হয়েছিল।
ধর্মচক্র সুত্র দেশনা কালে সংকম্পি- নিচের দিকে নেমে নেমে কম্পন, সম্পকম্পি- উপর দিকে উঠে উঠে কম্পন, সম্পবেধি- এদিক সেদিক হেলে-ঢুলে এক সাথে কম্পিত হয়েছিল।
বিষয়ক্ষেত্রঃ
বুদ্ধের জ্ঞানপরিধি অনুসারে অনন্তচক্রবাল জুড়ে বিস্তৃত!
এই ত্রিবিধক্ষেত্রে জাতিক্ষেত্র ১০ সহস্র চক্রবাল হলেও আজ্ঞাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে আজ্ঞাক্ষেত্র অন্তর্ধান হলে জাতিক্ষেত্রও তিরোধান হয়। এ ধরনের কল্পধ্বংসকাল বিষয়টা দিন/রাতে ধ্বংস হয়ে যায় এমন নয়। অসংখ্যেয় কাল ধরে ধ্বংস হতে থাকে।
অসংখ্যেয়কে সংখ্যা দিয়ে গণনা করা অসম্ভাবের কারণে উপমা দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে দীর্ঘ ০৮ যোজন, প্রস্থ ০৮ যোজন, উচ্চতা স্তর ০৮ যোজন এক অখণ্ড পাথরখণ্ডকে প্রতি শত বছরে একবার করে তেলভেজা তুলা টুকরো দিয়ে মূছলে পাথরখণ্ড ক্ষয় হয়ে যেতে পারে কিন্তু অসংখ্যেয় কল্পকে গণনা করে শেষ হবে না। এভাবেই কল্প ধ্বংস হয়ে থাকে।
লোকজগত সবসময় একই রকম থাকে না ধ্বংস হয় তাই 'লোক' বলে। পালিতে- "অনিচ্চ ভূতেন পলুজ্জতীতি লোকো"- অনিচ্চ ভূতেন- চিরনিত্য স্থায়ী থাকার স্বভাব নাই তাই 'লুজ্জতি'- ধ্বংস হয়। ইতিতস্মা- এ কারণে লোকো- লোকজগত বলে।
লোকজগত ০৩- প্রকারঃ
- আকাশলোক,
- সংস্কারলোক ও
- সত্ত্বলোক।
১। আকাশলোকঃ
চারদ্বীপ এক মহাপৃথিবী। বিস্তৃতি মহাসাগর চতুর্দিক মাঝখানে মহাপৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত। এ পর্বতের চতুর্দিকে সপ্তর্ব পর্বতমালা, ০৭টি মহাসাগর, ২০০০ টি ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ, চারদ্বীপ- প্রতিটি দ্বীপে ৫০০০ টি করে ছোট্টদ্বীপ পরিবেষ্টিত, ০৬টি-দেবস্বর্গ, ২০টি ব্যহ্মলোকে নিয়ে আকাশলোকে এক চক্রবাল। ১০দিকে এ চক্রবালের মত আরো অনন্ত চক্রবাল রয়েছে।
অঙ্গুত্তর নিকায় আনন্দবর্গে আকাশলোক সম্পর্কিত কিছু কথাঃ
- চূল সহস্সী লোকধাতু- (ক্ষুদ্র সহস্র লোকধাতু) হল ০১ হাজার চক্রবাল।
- মজ্ঝিম সহস্সী লোকধাতু- (মধ্যম সহস্র লোকধাতু) হল ১০ সহস্র চক্রবাল।
- মহা সহস্সী লোকধাতু- (মহা সহস্র লোকধাতু) হল ০১ লক্ষ কোটি চক্রবাল। এ ত্রিবিধ লোকধাতুই আকাশলোক।
জাতিক্ষেত্র লোকধাতুঃ
বুদ্ধগণ উৎপন্ন ক্ষেত্রকে জন্মক্ষেত্র বলে। এ জন্মক্ষেত্রতে বিদ্যমান দেব ব্রহ্মাগণ বুদ্ধের পরিষদ। বুদ্ধ জন্মের সময়ে পৃথিবী কম্পন, আলোক উৎপন্ন ইত্যাতি জন্মক্ষেত্রে ১০ সহস্র চক্রবাল একসাথে কম্পনটা ধর্মত নিয়ম।
আজ্ঞাক্ষেত্র লোকধাতুঃ
মহা সহস্র লোকধাতু ০১ লক্ষ কোটি চক্রবালকে আজ্ঞাক্ষেত্র বলে। বুদ্ধের অমৃত পরিত্রাণ গুণের বিস্তৃতিটা আজ্ঞাক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রের বিদ্যমান দেব ব্রহ্মাগণ বুদ্ধের পরিষদ তারা সকলে বুদ্ধের আজ্ঞা পরিত্রাণ সুত্র শ্রবন করতে সুযোগ পান।
বিষয়ক্ষেত্র লোকধাতুঃ
অনন্ত চক্রবালগুলো "বিষয় লোকধাতু" বুদ্ধের সর্বজ্ঞতা জ্ঞান বিচরণক্ষেত্র। এ বিষয়ক্ষেত্রে অন্তরর্ভুক্ত সকল জানার বিষয় কে সর্বজ্ঞতা জ্ঞানের দ্বারা তৎক্ষণাৎ জাত হন।
এ ছাড়া-
- কাম লোকধাতু হল-১১টি কামভূমি।
- রূপলোকধাতু হল- ১৬টি রূপ ব্রহ্মভূমি।
- অরূপলোকধাতু হল- ০৪টি অরূপ। ৩১ লোকধাতুও আকাশলোক।
কামভূমি-পরনির্মিতবসবর্তী থেকে অবীচি নরক পর্যন্ত। রূপব্রহ্মাভুমি- ব্রহ্মপরিসজ্জ থেকে অকনিষ্ট ব্রহ্মালোক পর্যন্ত। রূপ না থাকা চারটি অরূপভুমি- ০৪-মার্গ ০৪-ফল হল অনবস্থান লোকমুক্ত লোকোত্তর (আকাশলোক বলা হয় না)।
এ মহাপৃথিবী জলে স্থিত। জল বায়ু মণ্ডলে স্থিত। বায়ু অজটা আকাশলোকে স্থিত। নিচে উপরে সমান্তরালে অন্তহীন। তল আকাশে স্থির এক মহাবায়ুমণ্ডল পূর্ণ রয়েছে। এ মহাবায়ুমণ্ডল ০৯ কোটি ৬০ লক্ষ বিস্তৃত। এ মহাশক্তিশালী বায়ুমণ্ডল ০৪ লক্ষ ৮০ হাজার যোজন জলরাশি স্তরকে বহন করে এবং ০২ লক্ষ ৪০ হাজার যোজন বিশাল মহাপৃথিবী মাটির স্তরকেও বহন করে থাকে। সেগুলোকে কল্পের মাটি, জল, বায়ু বলে।
আকাশলোক উৎপত্তিঃ
রূপকলাপ সহজাত তেজধাতু জন্ম-জরা-মরণ, আকাশ লোকধাতু উৎপত্তি ও ধ্বংসের কারণ। তেজধাতু উত্তাপে পরিপক্ক, জীর্ণ করে। তাই এ তেজধাতু সহজাত উৎপন্ন রূপগুলোকে সবসময় জ্বলে-পুড়ে, পরিপক্ক করে, জীর্ণ করে, এ ক্ষণ থেকে আরেক ক্ষণে পৌছে দেয়। শীততেজও ঠাণ্ডাতেজধাতু শক্তির কাজ করে দেয়। উষ্মতেজ শীত তেজধাতুর চেয়ে প্রবল শক্তিশালী। সংস্কার ধর্ম উৎপত্তির মূলে নিচে চার স্বভাব ধর্মতা থাকে-
জাতি- সংস্কারধর্ম উৎপত্তি ক্ষণ।
আচয- উৎপন্নধর্ম বৃদ্ধি ক্ষণ।
উপচয়- বৃদ্ধিধর্ম ক্রমশ বৃদ্ধিক্ষণ।
সন্ততি- ধাপে ধাপে বৃদ্ধি হয়ে সময় সীমা ফুরিয়ে গেলে-
পরিপক্ক-জরা-জীর্ণের কারক জীর্ণতেজের শিকার হয়ে ক্রমশ জরাক্ষণ বার্ধক্যক্ষণ মরণক্ষণে পৌঁছে ধ্বংস হয়ে যায়। এটিই সংস্কার ধর্মের বাস্তব প্রমাণ। এভাবে উৎপন্নের পর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার স্বভাব ধর্ম হল ধর্মের নিয়ম।
২। সংস্কারলোকঃ
আকাশলোকে উৎপন্ন ধ্বংস হয়ে থাকা সবকিছু সংস্কারলোক। সংক্ষেপে স্কন্ধ, আয়তান, ধাতু, সত্য, প্রতিত্যসমুৎপাদ ধর্মগুলো সংস্কারলোক।
৩। সত্ত্বলোকঃ
সত্ত্বলোক বলতে- তির্যক প্রেত অসূর নিরয় মনুষ্য দেব ব্রহ্মাহণ সত্ত্বলোক। দুর্গতি অহেতুক, সুগতি অহেতুক, দ্বি-হেতুক, ত্রি-হেতুক, অষ্ট আর্য পুদ্গল সবি সত্ত্বলোকেরেই। এ ছাড়া- জলে, স্থলে, অন্তরিক্ষে, দৃষ্ট অদৃষ্ট সত্ত্ব। গর্ভাশয়, ডিম্বাশয়, জলাশয়, উপপাতিক সত্ত্ব। পদহীন, দ্বিপদ, চতুর্পদ, বহুপদ, রূপ, অরূপ সত্ত্ব, সংজ্ঞা-অসংজ্ঞা, সমস্ত সত্ত্বই সত্ত্বলোক।
সবার জ্ঞান ভাণ্ডার পূর্ণ হয়ে হিত সুখ মঙ্গল হোক।
#সাধু-সাধু-সাধু।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি।তারিখ-০১জুন ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment