বুদ্ধ দর্শনে ক্লেশ মানে কি বুঝানো হয়েছে।

ক্লেশ কি? আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

ক্লেশ কি বৌদ্ধধর্মের আলোকে আলোচনা।


ক্লেশ কি?

ক্লেশ (কলুষ) মনকে উত্তপ্ত করে। মনকে কলুষিত করে। মনকে মলিন করে বলে ক্লেশ।

ক্লেশ ১০টি-

১। লোভ ক্লেশ- কামনা বাসনা চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
২। দ্বেষ ক্লেশ- ক্রোধ (হিংসা) চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৩। মোহ ক্লেশ- সত্যেকে না জানা অজ্ঞতা চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৪। মান ক্লেশ- অহম, আমিত্ব, অহংকার, মান, ভান চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৫। দৃষ্টি ক্লেশ- অন্ধবিশ্বাস (মিথ্যাদৃষ্টি) চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৬। বিচিকিৎসা ক্লেশ- দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সংশয় চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৭। থিন ক্লেশ- অলস (হীনবীর্য) চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৮। উদ্ধত্য ক্লেশ- বিক্ষিপ্ত (অস্থির) চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
৯। অহিরিক ক্লেশ- পাপে নির্লজ্জ চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।
১০। অনোত্তপ্য ক্লেশ- পাপে ভয়হীন। চিত্তকে উত্তপ্ত করে। কলুষিত করে। মলিন করে।

এ ১০টি ক্লেশ থেকে যে কোনটি মনে প্রবেশ করলে চিত্ত শান্তি না পেয়ে উত্তপ্ত হয়, চিত্ত নির্মল না হয়ে কলুষিত হয়, শুভ্র না হয়ে মলিন হয়।

যেমন- কারো মনে কোন জিনিসের প্রতি লোভ উৎপন্ন হলে ঐ জিনিসকে না পাওয়ার পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়, জ্বলতে থাকে, চিত্ত মলিন কলুষিত হয়।

মার্গের কাজ দু'টিঃ

"কিলেসে মারন্তো নিব্বানং গচ্ছতী'তি মগ্গো"
১। মার্গ ক্লেশগুলোকে প্রহান করে।
২। তারপর নির্বাণে পৌঁছে দেয়।

স্রোতাপত্তি মার্গফল, সকৃদাগামী মার্গফল লাভী পুদ্গল দৃষ্টি ও বিচিকিৎসাকে ছেদন করেন।

অনাগামী মার্গফল লাভী দ্বেষক্লেশ (হিংসা)কে সমূলে ছেদন করেন।

অরহত্ব মার্গফল লাভী অবশিষ্ট লোভ, মোহ, থিন-মিদ্ধ (অলসতা-জরতা), উদ্ধত্য, অহিরিক, অনোত্তপ্য ক্লেশ গুলোকে সমূলে প্রহান (উৎপাটন) করে সোপাদিশেষ নির্বানকে প্রত্যক্ষ করেন।


চিত্তের কলুষ ১০টি-

১। লোভ- পাওয়ার ইচ্ছা।
২। দ্বেষ- ক্ষতি করার ইচ্ছা।
৩। মোহ- সত্যকে না জানা।
৪। মান- আমিই সবকিছু বলে মনে করা অহংকার।
৫। দিট্ঠি- মিথ্যাদৃষ্টি।
৬। বিচিকিচ্ছা- সংশয়, দ্বিধা।
৭। থিন- অলস।
৮। উদ্ধচ্চ (উদ্ধত্য)- বিক্ষিপ্ত, চঞ্চল, অস্থির।
৯। অহিরিক- পাপ নির্লজ্জ।
১০। অনোত্তপ্য- পাপকর্ম ভয়হীন।

লোভ- মানুষকে সবসময় উত্তপ্ত করে, সবসময় নিষ্ঠুর আচরণ করে, সবসময় ডুবে দেওয়ার কাজ করাই বলে বুদ্ধ দেশনা করেছিলেন।

লোভের মূল স্বভাব পৃথকজনকে উম্মাদ করলে পরে রাগ হয়, দৃঢ়াস্রব সারাগ হয়। সরাগ হলে ঘুমাতে পারে না, খেতে পারে না, হৃদরোগ হয়।

লোভের কারণে সত্ত্বগণের চিত্ত দেখা, শুনা, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ও ভাব বিষয় টানে শিকার হয়। বিষয় টানকে প্রতিরোধ করার নিরুপায় হয়ে কাম্য বিষয়ের পেছনে ছুটে গিয়ে মরে। পতঙ্গ যেমন আগুনে পরে মরে।

বিষয় দেখলে- লাগে। এ লাগার স্বভাবটা লোভ। কেন লাগে? নন্দিরাগের কারণে লাগে। এ লাগার ইচ্ছাটা লোভের আকার প্রকার স্বভাব। দেখা, শুনা, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ও ভাবের বিষয়কে ভুলে যেতে পারি না আসক্ত হয়ে পরে সেটিকে নন্দিরাগ বলে।

পাগল বলতে সেই (চিত্তসস্স রতা) চিত্ত উত্তপ্ত জ্বালা পোড়ার উপায়াস হতাশার নিরাশের কারণ। লোভ সমস্ত চাহিদা মেটাতে চাই। চাহিদা প্রবল হলে হতভম্ব বেহুশ হয়ে পরে, লাঘব না হলে আত্মহত্যা করতেও ভাবে না। বিচার বিশ্লেষণ সম্প্রজ্ঞান শূন্যস্তরে নেমে যায়। যাক সবার জ্ঞান প্রজ্ঞা উৎপন্ন হোক।

মূল তৃষ্ণা ১০৮টি এবং ১৫০০ ক্লেশ (চিত্তকে কলুষকারী)- ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের।

দশ-প্রকার ক্লেশঃ

লোভ, দ্বেষ, মোহ। মান, দৃষ্টি, বিচিকিচ্ছা। থিন, উদ্ধত্য, অহিরিক, অনোতপ্য।

১৫০০ ক্লেশঃ

লোভচিত্ত "তে পঞ্চ" (চিত্ত ১ + চৈতসিক ৫২ = ৫৩) এগুলোকে "নাম তিপান্ন" বলে। লোভচিত্তটি- নিষ্পন্নরূপ ১৮টি, লক্ষণরূপ ৪টি, মোট ৭৫টি রূপালম্বন গ্রহণ করে। এ ৭৫টি রূপালম্বন অধ্যত্ত-বহিদ্ধ (ভেতর-বাহির) রয়েছে। এ লোভচিত্তটি ভেতর এবং বাহির রূপালম্বন গ্রহণ করে। সেগুলোকে যোগ করলে (৭৫+৭৫=১৫০) ১৫০টি লোভচিত্ত হয়। সেই ১৫০টি লোভচিত্তকে ১০-প্রকার ক্লেশের সাথে গুণ করলে (১০×১৫০=১৫০০) সর্বমোট ক্লেশ ১৫০০টি হয়।

মূল তৃষ্ণা ১০৮-প্রকারঃ

কাম তৃষ্ণা, ভব তৃষ্ণা ও বিভব তৃষ্ণা। এ ত্রি-তৃষ্ণাগুলো ৬টি আলম্বন গ্রহণ করে। সেগুলোকে গুণ করলে (৬×৩=১৮) তৃষ্ণা হয়। এ ১৮টি তৃষ্ণা ত্রি-কালের আলম্বনকে গ্রহণ করে। সেগুলোকে গুণ করলে (৩ ×১৮=৫৪) তৃষ্ণা হয়। এ ৫৪টি তৃষ্ণা ভেতর এবং বাহিরের আলম্বনকে গ্রহণ করে। সেগুলোকে গুণ করলে (৫৪×২=১০৮) মূলতৃষ্ণা ১০৮টি হয়ে থাকে।

সবার তৃষ্ণা এবং ক্লেশ সম্পর্কিত জ্ঞান ভাণ্ডার পূর্ণ হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।