অভিধর্ম কি, অভিধর্ম শিক্ষার উপকারিতা।
অভিধর্ম শিক্ষার উপকারিতা সম্পর্কে দেশনা করেছেন ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
অভিধর্ম না বুঝলে মিথ্যা নকলধর্মের হাতে ঠকা খাইঃ
অভিধর্ম শিক্ষায় সম্যকদৃষ্টি পরিপক্ক হলে মিথ্যা নকলধর্ম এর হাতে ঠকা খায় না। অভিধর্ম শিক্ষা নিজের সম্যকদৃষ্টি চক্ষু খুলে দেয় তথা যাওয়ার পথকেও পরিস্কার করে দেখায়। তাই এই শিক্ষা ইহ ও পরকালের জন্য মহোপকার সাধন করে।
কারো কারো মতে- অভিধর্ম না বুঝে কেমনে স্রোতাপন্ন হয়? অভিধর্ম না শিখে স্রোতাপন্ন হতে পারে কি?
অভিধর্ম বলতে কি বুঝায়?
০৭ খণ্ড অভিধর্মকে বলা হয় কি?
খণ্ড খণ্ড অভিধর্ম গুলোকে না শিখে স্রোতাপন্ন হতে পারে কি?
নামধর্ম, রূপধর্মকে অভিধর্ম বলে। অভিধর্ম না বুঝলে কখনো স্রোতাপন্ন হতে পারে না। নাম-রূপ সম্পর্কিত ধর্মশ্রবন জ্ঞান ছাড়া কখনো স্রোতাপন্ন হতে পারে না। স্রোতাপন্ন হয় নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান থেকে শুরু হয়। বিশাখা ০৭ বছর বয়সে স্রোতাপন্না হয়েছিলো। বিশাখা এত অল্প বয়সে কিভাবে তার নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান হলো? বিশাখা বুদ্ধের চার আর্যসত্য ধর্মদেশনাকে শ্রবন করার সাথে সাথে নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান উৎপন্ন হয়ে স্রোতাপন্না হয়েছে।
সেটি বুঝা যাক্- ৮৯টি চিত্ত, ৫২টি চৈতসিক, ২৮টি রূপ মিলে পুরো নাম-রূপ সমষ্টি পঞ্চস্কন্ধ। এভাবে জানাকে নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান বলে না। এরুপ জানাকে অভিধর্ম শিক্ষা বলে।
বিশাখা তার যে নাম-রূপটিকে যতটুকু পরিচ্ছেদ করে জানার প্রয়োজন ছিল ততটুকু সেটিকে জ্ঞাত হয়ে স্রোতাপন্ন হয়েছে।
যেমন- পঞ্চস্কন্ধকে জানে বলতে দেহের ভেতরের বেদনাকে জানে। সংজ্ঞাকে জানে। সংস্কারকে জানে। বিজ্ঞাণকে জানে। এগুলো হলো নামস্কন্ধ'কে জানা।
কেবল বেদনাকে জানলেও নির্বান লাভ করে, রূপকে জানলেও নির্বান লাভ করে। পঞ্চস্কন্ধ থেকে যে কোন ০১টি স্কন্ধকে জানলেও নির্বান লাভ করে। ত্বরিত বুদ্ধি ত্রি-হেতুক পুদ্গলের ক্ষেত্রে 'পঞ্চস্কন্ধ' বলে ধর্মদেশনা শ্রবনের সাথে সাথে রূপ-নাম সম্পর্কিত জ্ঞান উৎপন্ন হয়ে উত্তম লোকোত্তর জ্ঞান লাভ করে।
সুক্ষ্মোপলব্ধি নাম-রূপকে পুরো না বুঝে স্রোতাপন্ন হতে পারে কি?
অভিধর্ম না শিখে স্রোতাপন্ন হতে পারে কি?
অবশ্যই হতে পারে। যেমন- পুরো গাড়িতে কি কি যত্রাংশ থাকে সবগুলোকে জানা না থাকলেও কেবল চালনা করতে জানা থাকলে গাড়িকে ড্রাইভ করা যায়। তবে গাড়ির যন্ত্র বিকল হলে Workshop-এ গিয়ে ঠিক করতে হয়।
তেমনি- পুরো নাম-রূপ সমষ্টি কি কি জানা না থাকলেও কেবল রূপ বা বেদনা বা ধর্ম বা চিত্ত এ চারটি থেকে যে কোন একটিকে জানলেও স্রোতাপন্ন হতে পারে। যে কোন একটিকে নিখুঁত পরিস্কার করে জানাটা নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান।
তাই স্রোতাপন্ন হওয়ার জন্য নাম-রূপকে অবশ্যই জানতে হয়। অভিধর্মকে শিখতে হয় এ কথাও নাম-রূপকে নিখুঁত করে ধারনা রাখার শিক্ষা।
অভিধর্ম গ্রন্থশিক্ষা, নাম-রূপ স্বভাব ধর্মতা শিক্ষা সম্যকদৃষ্টিকে পরিপক্ক করতে উপকার করে।
এগুলোকে না শিখে তথা নাম-রূপের যে কোন ০১টি স্কন্ধকে না বুঝে ভাবনা করলে নির্ঘাত বিপদ সম্মুখীন হবে। গাড়ি কিভাবে ড্রাইভ করতে হয় না জেনে গাড়ি চালালে নির্ঘাত Accident.
এটি নামস্কন্ধ, এটি রূপস্কন্ধ বলে জানা নাই। এটি প্রজ্ঞপ্তি, এটি পরমার্থ বলে পার্থক্য বুঝার জ্ঞান নাই। এমন হলে চিত্তে প্রবেশ করা নানারকম প্রজ্ঞপ্তি আলম্বনকে পরমার্থ মনে করে ভুল ধারনা হতে পারে।
সমথ আলম্বন হল প্রজ্ঞপ্তি। বিদর্শন আলম্বন হল পরমার্থ। প্রজ্ঞপ্তি আলম্বনকে পরমার্থ মনে করে ভাবনা করলে ঢুস খাবে। অভিজ্ঞতা ছাড়া গাড়ি চালালে Accident হবে। তাই অভিধর্ম শিক্ষার আলোর থেকেই বিদর্শন ভাবনা করলে সোজা গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।
নাম-রূপকে জানতে হলে- নাম-রূপ কি সেটিকে নিখুঁত করে শিখতে হয়। পুরো অভিধর্ম ৭-খণ্ডেরও চিত্ত, চৈতসিক, রূপ নির্বানধর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে।
অভিধর্ম শিক্ষা- সম্যকদৃষ্টিকে পক্ক করে বলে ধারনা রাখা। অভিধর্ম না জেনে ভাবনা করলে অভিজ্ঞতা ছাড়া গাড়ি চালনা করার মত হবে। যারা গাড়ি চালাতে জানে তাদের কাছ থেকে শিখে নিয়ে গাড়ি চালালে অসুবিধা পরে না। তাই ভাবনা করার আগে অন্ততঃ নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান অভিধর্ম শিখে রাখা।
গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হলে Workshop-এ মেকানিককে যেরকম দেখাতে হয়। সেরকম অন্ততঃ নাম-রূপ পরিচ্ছেদ জ্ঞান অভিধর্ম শিখে রাখা।
কেবল গাড়ি চালাতে জানে কিন্তু বিকল ইঞ্জিন ঠিক করতে না জানলে সমস্যা তো পরবেই। যারা ইঞ্জিন সম্পর্কে অভিজ্ঞ, গাড়ি কি হয়েছে না হয়েছে সেটিকে তারা ভালো করেই জানে। অভিধর্মকে জানা থাকলে ভাবনা রত সাধক তার কি সমস্যা হয় না হয় সেটিকে নিজে নিজে ঠিক করে নিতে জানে।
নিজে নিজেও বুঝে না, বুঝিয়ে দেওয়ার মত গুরুও নাই এ অবস্থা হলে সাধকের ভাবনা বিরক্তিকর হতে পারে। অভিধর্ম অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না কারণ আগে শেখে রাখার পুরনো কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠে।
ভাবনা করতে লিখাপড়া জানার দরকার হয় না। তবে থাকলে মজবুত ভিত্তি হয়। সাধারণ জীবনেও লিখাপড়া জানলে ভালো, না জানলে ঠকা খাই।
অভিধর্ম শিক্ষা ভিত্তি না থাকলে স্রোতাপন্ন না হয়েও নিজেকে স্রোতাপন্ন মনে করে মিথ্যাধর্ম থেকে ঠকা খাই। নিজেকে নিজে লোকোত্তর জ্ঞান লাভ করেছে বলে মনে করে। টাকাপয়সা ঠকা খাওয়া সাময়িক মাত্র কিন্তু মিথ্যাধর্ম ঠকা খেলে পুরো সংসারে কষ্ট হয়।
তাই অভিধর্ম শিক্ষাটা সম্যকদৃষ্টিকে পক্ক হতে উপকার করে। অভিধর্ম শিক্ষা চিত্তকে সঠিক পথ দেখাই। অভিধর্ম জানা থাকলে মিথ্যাদৃষ্টি থেকে ঠকা খাই না।
অভিধর্ম জানা না থাকলে সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত না হয়েও নিজেকে হয়েছে বলে মনে করে। এটাই ঠকা খাওয়ার কাণ্ড। অভিধর্ম শিক্ষা থাকলে ঠকা না খেয়ে মিথ্যাদৃষ্টির জায়গায় সম্যকদৃষ্টি জ্ঞান উৎপন্ন হয়।
মানুষের স্বভাবে- শ্রদ্ধা, নিরোগ, দোষ স্বীকারে সরল মন, বীর্যবান, সত্যমিথ্যা বিশ্লেষণের কৌশল থাকলে লোকোত্তর জ্ঞান লাভ করতে সহজ হয়ে থাকে।
তাই অভিধর্ম শিখে রাখলে প্রতারণায় পরার কোন ঝুকি থাকে না। মিথ্যাধর্ম থেকে ঠকা খাওয়া ব্যক্তি জগতে ভুরিভুরি রয়েছে। নকল, কৃত্রিম, ভেজাল ধর্ম থেকে ঠকা খেয়ে অনেকের জীবন ক্ষতি হতে দেখেছি। তাই অভিধর্মকে জানার চেষ্টা থাকাটা মহা হিত সুখকর। সবার মঙ্গল হোক।
#সাধু-সাধু-সাধু।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।তারিখ-০৯জুন ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment