কুশিনগর যুগ্ন শালবৃক্ষ তলে কেমন শোক ছিল।

কুশিনগর যুগ্ন শালবৃক্ষ তলে কেমন শোক ছিল, দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

date-25may2021.

কুশিনগর যুগ্ন শালবৃক্ষ তলে কেমন শোক ছিল।


মহাসাল ১৪৮ বৈশাখী পূর্ণিমায় কুশিনগর রাজ্যে মল্লদের শালবনে ৪৫ বর্ষা অশীতি বছর পূর্ণদিনে অরুণোদয় লগ্নে গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ পরিনির্বানের নিবৃত্ত হন।

পরিনির্বানের অল্পকাল পূর্বে যেই সময়টুকু ছিল উপস্থিত ভিক্ষু পরিষদের উদ্দেশ্যে "অন্তিম দেশনা" নিম্নরূপে প্রদান করেছিলেন।

“হন্দদানি ভিক্খুবে আমন্তযামি বো
বযধম্মা সঙ্খার অপ্পমাদেন সম্পাদেথ।”

“ভিক্খুগণ! এই মুহুর্তে তোমাদের অন্তিম দেশনা করছি। পঞ্চস্কন্ধ নাম-রূপ সংস্কার ধর্মসমূহ ক্ষয়ব্যয়ের শেষক্ষণ আছে। তোমরা অপ্রমাদের সহিত স্বীয় কুশল কর্ম সম্পাদন করবে।”

বুদ্ধ পরিনির্বানের অন্তিম সময়ের পূর্বে ৪৫ বছর ধরে যেই উপদেশগুলো দিয়ে গেলেন সেগুলোকে নিয়েই অপ্রমাদের সহিত অবস্থান করতে বলে গেলেন।

দেব মনুষ্যদের মধ্যে যারা যত মার হয়ে দাঁড়িয়েছিল বুদ্ধ তাদেরকে সর্বদা মহাকরুণার মৈত্রীগুণ দিয়ে সিক্ত করেছিলেন।

মারের মধ্যে জাতি (পুনজন্ম) দুঃখকে নিরোধ করতে পারলেও কর্মের উৎপত্তি ০৩টি প্রকৃতিগত জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর মারকে “ন অতিক্কমযতো” অনতিক্রম্য বলে গেলেন।

বুদ্ধ পরিনির্বান কালে সংবেগ জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছিল এমন চারজনে- তাঁরা হলেন সহম্পতি ব্রহ্মা, দেবরাজ শক্র, সেবক আনন্দ ও ভদন্ত অনুরুদ্ধ।

সহম্পতি ব্রহ্মা কিরূপে সংবেগ জ্ঞান উৎপন্ন করেছিলেন?
“এ জগতে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন অতুলনীয় অতীত পূর্ব পূর্বে উৎপন্ন বুদ্ধগণের সদৃশ দশবলের পরিপূর্ণ সুগত জ্ঞেয় বিষয়ের সর্বজ্ঞ দেব মনুষ্যগণের শাস্তা সর্ব প্রকার গুণের অনন্তগুণী বুদ্ধকেও এরূপে পরিনির্বাপিত হতে হল” বলে সংবেগ উৎপন্ন হল।

জন্মের সাধারণ সত্ত্বগণের ক্ষেত্রে কিবা বলার থাকে? ধাতুসমষ্টি পঞ্চস্কন্ধকে কেবা নিক্ষেপ না করে অতিক্রম করতে পারে? সব সংস্কারেই উৎপন্ন হলে ব্যয় হয়ে যায়।

অতপর শক্র দেবরাজও নিম্নরূপে সংবেগ জ্ঞান উৎপন্ন করেছিলেন, পঞ্চস্কন্ধ নাম নিত্য না থাকার রূপ সংস্কার ধর্মসমূহ ক্ষয়ব্যয় হয়ে থাকে। ক্ষয়ব্যয় ধর্মী ধাতুসমষ্টি মহা অসংস্কৃত নির্বানে নিভে গেল; কেবল নিরোধেই পরম সত্য।

তারপর বুদ্ধের সেবক আনন্দ সংবেগ জ্ঞান উৎপন্ন করেছিলেন নিম্নরূপে-
অনন্তগুণে গুণী সর্বজ্ঞ সম্যকসম্বুদ্ধ পরিনির্বানের সাথে সাথে ভীতিকর লোমহর্ষক ভূমণ্ডল প্রকম্পিত হয়ে গেল।

অবশেষে ভদন্ত অনুরুদ্ধ এর নিম্নরূপে সংবেগ জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছিলেন- অষ্টলোক ধর্মের অকম্পিত সমাহিতাদি গুণের অনন্ত বুদ্ধের আশ্বাস প্রশ্বাস থেমে গেল। তৃষ্ণামুক্ত পঞ্চচক্ষু পরিপূর্ণ সর্বজ্ঞ বুদ্ধ ক্লেশাগ্নিমুক্ত নির্বানকে প্রত্যক্ষ করে পরম নিবৃত্তি ধাতুতে নিভে গেল।বুদ্ধ সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিয়াচিত্ত অবস্থান থেকে শারীরিক ব্যথাবেদনাকে সহ্য করে, দাবাগ্নি শিখা নিভানোর সদৃশ সর্ব বাঁধামুক্ত চিত্তের নিবৃত্ত হয়ে গেলেন।

সুগত পরিনির্বানের পর দশ সহস্র চক্রবাল প্রচণ্ড বিকট শব্দের প্রকম্পিত হল। অনাগামী, অরহত ব্যতীত সংঘ পরিষদ সহ দেব ব্রহ্মা, বিলাপ রোদন করল। অনাগামী অরহত্ব মার্গ ফলের প্রতিষ্ঠিত পুদ্গলগণ সংস্কারজাত উৎপন্ন হলে বিলয় হয় বলে জ্ঞানসম্প্রযুক্ত চিত্তে নাম-রূপ সমষ্টি ধর্মের ভয়জ্ঞান উৎপন্ন করে বিলাপ রোদন না করে নিরবে শান্ত হয়ে থাকল ।

“ধর্ম ঢোল বাজিয়ে গেল ত্রি-ভূবন সহস্র চক্রবাল সত্ত্বগণের জন্যে। মুক্তিকামী সত্ত্বগণ অমৃত ধর্মরস পান করে নিল সুগতের মুখে। ৪৫ বর্ষা ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেল সত্ত্বগণের। কুশিনগর রাজ্যে মল্লদের যুগ্ম শাল বৃক্ষতলে। ১৪৮ মহাসালে অশীতি বছর পূর্ণবয়সে পরিনির্বাপিত হলেন মঙ্গলবারে”

বুদ্ধ পরিনির্বানের আগে ভিক্ষু পরিষদের উদ্দেশ্যে দেশিত অন্তিম দেশনা শ্রবনের শেষে পরিনির্বানের সাথে সাথে সহম্পতি ব্রহ্মা, দেবরাজ শক্র, বুদ্ধের সেবক আনন্দ ও অনুরুদ্ধ এই চারজনের জাগানো সংবেগ মূলক অমৃত দেশনাটি সত্ত্বগণের হিত সুখ মঙ্গল তরে সমান সমান সমান ভাগে বিতরণ করলাম।
“সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু।”

#সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি।
সময়-দুপুর ০১:৫৯ ঘটিকা 
তারিখ-২৩ মে ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।