অত্যন্ত বড় মারাত্মক দুঃখজনক কর্ম কি।
অত্যন্ত বড় মারাত্মক দুঃখজনক কর্ম কি ? আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
অত্যন্ত বড় মারাত্মক দুঃখজনক কর্ম কি ? "অরিযূপ বাদকং"- আর্যনিন্দা কর্ম করে থাকলে ভাবনা করলেও হবে না।
সে ভিক্ষু নয়, ভিক্ষুত্ব নেই এ কথা যাতে না বলে ফেলে। "অরিযূপ বাদকং" বললে বড়সড় আর্যনিন্দা বাচনিক কর্ম হয়।
বর্তমান যুগে কিছু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের "অরিযূপ বাদকং" ভিক্ষুদেরকে যা তা অপবাদ করতে দেখা যায়, শুনা যায়।
কিছু বৌদ্ধদেরকে বলতে ইচ্ছা করছে। কেন? এই কর্ম যাতে কারোর না হয়। সবার জীবন সুস্থ সুন্দর হয়ে মার্গফল জ্ঞান লাভ করা তথা দুঃখ থেকে মুক্ত হবার ভাবনা করার সুযোগ লাঘব হোক।
বৌদ্ধরা পরম গন্তব্যে পৌঁছার মার্গফল ও নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার জন্য পারমী পূরণ করে থাকেন।
বৌদ্ধরা নির্বাণ গমনের পথে এই আর্যনিন্দা কায়িক বাচনিক কর্ম যাতে না করে ফেলে। এই জন্য বৌদ্ধদেরকে খেয়াল রাখার জন্য উপকার করছি।
এই কর্ম করে ফেললে ভাবনা হয় না, করলেও মার্গফল জ্ঞান উদয় হয় না।
বৌদ্ধদের গৃহী আর্য, ভিক্ষু আর্য থাকে। কোন গৃহী কোন এক ভিক্ষুকেও ভিক্ষু নয়, তার ভিক্ষুত্ব নেই। জ্ঞাতে হোক, অজ্ঞাতে হোক অপবাদ করলে "অরিযূপ বাদকং'- আর্যনিন্দা কর্ম হয়।
এই কর্ম অত্যন্ত বড় দুঃখজনক। তাই কাউকে অপবাদ না করাই নিজের জন্য নিরাপদ।
নিজে যাকে অপবাদ করে, সে আর্য না হলেও, অন্ততঃ শীলধর্ম রক্ষাকারী হলেও "অরিযূপ বাদকং"- আর্য নিন্দার কাছাকাছি কর্ম হয়।
একটি খেয়াল রাখার কথা হল- মানুষের বিনয় সম্পর্কিত জ্ঞান খুবিই কম, তাই যা শুনে তা বিশ্বাস করে এবং বলে ফেলে।
যেমন- এক ভিক্ষুকে বিকাল ভোজন বা কিছু খেতে দেখল। নৃত্য দর্শন করে দেখতে পেল। এই ভিক্ষু বিকাল ভোজন করেছে তার ভিক্ষুত্ব নাই যেন এরুপ বলে না ফেলে।
ভিক্ষু বিকাল ভোজন করাটা ঠিক না কারণ বুদ্ধের শিক্ষাপদে বিকাল ভোজন না করতে উল্লেখ আছে। করলে আপত্তি হয়।
ভিক্ষুত্ব নাই বলাটা ঠিক না। ভিক্ষু চার অকরণীয় বিনয় লঙ্ঘন করলে ভিক্ষুত্ব থাকে না কথাটি একদম ঠিক। সেটিকে না জেনে কোন এক ভিক্ষু বিকাল ভোজনকে দেখে ভিক্ষুত্ব নাই বললে অপবাদ নিন্দা হয়।
যেমন- ভিক্ষু বিকাল ভোজন বিনয় লঙ্ঘন করলে সতর্কতা (ভিক্ষু পরস্পরে নিজের অপরাধকে খেয়াল রাখা) মত সতর্কতা কথা শ্রবন করলে অনাপত্তি হয় সেই সাধারণ আপত্তিকে ফাঁসি মৃত্যুদণ্ডর মত মারাত্মক কথাবার্তা।
শ্রামণকেও শ্রামণত্ব নাই বললেও অপরাধ হয়। কারণ শ্রামণ বিকাল ভোজন করলে বালি তোলা দণ্ড, জল ভরা দণ্ড ভোগ করে অপরাধ মুক্ত হয়। পুন দশশীল গ্রহণ করলে তার শীল পূরণ হয়। তাই না বলাই নিজের জন্য নিরাপদ।
ভিক্ষু চার অকরণীয় শিক্ষাপদ, শ্রামণের দশবিধ লিঙ্গ পরিবর্তন শিক্ষাপদ ভঙ্গ না করলে, অন্য শীল শিক্ষাপদ ভঙ্গ বা আপত্তিগ্রস্ত হলেও ভিক্ষুত্ব, শ্রামণত্ব থাকে। তারা সংশোধনীয় বিনয় শিক্ষাপদ সম্মত চিকিৎসা করলে অনাপত্তি বা দোষ মুক্ত হয়।
ভিক্ষুকে ভিক্ষু নয় ভিক্ষুত্ব নেই। শ্রামণকে অশ্রামণ বললে "অরিযূপ বাদকং"- আর্যনিন্দা কাছাকাছি কর্ম হয়। সেটিকে খেয়াল রাখা উচিত।
নিন্দা প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি তারা আর্য হয়ে থাকেন তাহলে তো নিন্দাকারীর জন্য বড় দুঃখজনক। তাই পাপকে অনর্থক মূল্যবান রত্ন খরচ করে ক্রয় করে না রাখা। এটিকে সদা খেয়াল রাখা।
গৃহী- শীল রক্ষা করতে পারে বেশি হলে ১০-সুচরিত শীল, অষ্টশশীল, পঞ্চশীল। গৃহীদের এমন পরিস্থিতি হয় যে পঞ্চশীলকেও পুরোপুরি রক্ষা করতে হিমশিমে খায়। একুল ভাঙা ওকুল গড়ার শীল হয়।
ভিক্ষু ও শ্রামণ মারাত্মক শীল লঙ্ঘন না করলে, তাদের কিছু শীল ভঙ্গ হলেও অনেক শীল রক্ষা থাকে। যা গৃহী শীল থেকেও অনেক বেশি। তাই এই কর্ম না করাই নিজের জন্য নিরাপদ। মিলিন্দ প্রশ্নোত্তর গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে দুঃশীল ভিক্ষুদের ১০টি গুণ সেটিকে পড়ে নিতে পারেন।
কেবল গৃহীরা ভিক্ষুদেরকে না বলা নয়, ভিক্ষু পরস্পরও এই কর্ম না করাই উত্তম।
কোন কোন ভিক্ষু বললে অপরাধ হবে না এমন মনে করে। বলে তো ফেললে! যদি সেই ভিক্ষু ধ্যান মার্গফল জ্ঞান লাভী হয় তাহলে কি করবে? এটি হবে তার ভাগে বড় দুঃখজনক।
আর্য নিন্দা অত্যন্ত বড় মারাত্মক কর্ম তাই "অরিযূপ বাদকং"- এ কর্ম থেকে অপ্রমাদে দূর বহুদূরে বিরত থাকা। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
"অরিযূপ বাদকং" আর্যনিন্দা কুফল ১০টিঃ
(১) রক্তবমি হয়।
(২) ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতি হয়।
(৩) বিকলাঙ্গ হয়।
(৪) কুষ্ঠরোগ হয়।
(৫) পাগল হয়।
(৬) রাজ দণ্ডে দণ্ডিত হয়।
(৭) অভিযুক্ত হয়।
(৮) জ্ঞাতি হারায়।
(৯) ধন-সম্পদ ক্ষতি হয়।
(১০) আবাসঘর আগুনে পুড়ে। এই কর্ম না করুক। এই কুফল দুঃখও না হোক। নির্বান অব্দি সুখী হোক।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।তারিখ-০৯ জুলাই ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment