টিকটক-লাইকী আসক্তি, আধুনিক সমাজকে কি বার্তা দিচ্ছে।
টিকটক-লাইকী আসক্তি, আধুনিক সমাজকে কি বার্তা দিচ্ছে ?
tiktok & likee. টিকটক কিংবা লাইকী বর্তমান সময়ে বেশ পরিচিত নাম। গত কয়েক বছর যাবৎ টিকটক কিংবা লাইকীর ভিডিও এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি অনলাইন বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
এদেশে প্রথম প্রথম এই এ্যাপসগুলির বিষয়ে তেমন একটা প্রচার প্রচারণা না থাকলেও বর্তমান সময়ে টিকটক-লাইকীর বিভিন্ন ভিডিও ও এসবের আড়ালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের কারনে প্রতিনিয়ত বেশ আলোচনা ও সমালোচনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারনে বেশিরভাগ তরুন-তরুনীর মাঝে বর্তমানে মডেলিং এর দারুণ ঝোক পরিলক্ষিত হচ্ছে। টিকটক-লাইকীর আড়ালে অনেক উৎসুক তরুনী সেলিব্রিটি হওয়ার বিপরীতে নারী নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। কিছু কিছু ঘটনা সংবাদ মাধ্যমের বদৌলতে জনসম্মুখে প্রচার হলেও আরো কত অপ্রকাশিত ঘটনা ঘটছে তার কোন সীমা নেই। তাই এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুও এই টিকটক-লাইকী ভিডিও তৈরী করার জন্য দলে দলে জড়ো হয়ে বিভিন্ন মডেলিং টাইপের ভিডিও তৈরী করে চলেছে।
এইসব ভিডিওর বেশিরভাগই আবেদনময়ী এবং ইভটিজিং এর সামিল। যা বাস্তবে কেউ অনুকরণ বা অনুসরণ করলেই দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
যারা এইসব ভিডিও তৈরী করছে তাদের অনেকের মধ্যে, কি রকম ভিডিও তৈরী করা উচিৎ কিংবা কি রকম ভিডিও তৈরী করা উচিৎ নয় কিংবা কি রকম ভিডিও প্রচারিত হলে তা দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট খারাপ প্রভাব ফেলবে সেসব জ্ঞান আছে বলে মনে হয় না।
কারন অনেকে একজনে আরেক জনের দেখাদেখি এইসব ভিডিও তৈরী করছে। এইসব ভিডিও দেখার ফলে অনেক উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
অনেকে উন্মুক্ত স্থানে দৈনন্দিন হাঁটাচলা করার সময় বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ছেন। আবার অনেকে দেশের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেলেও দেখা যাচ্ছে এই টিকটক-লাইকীর ভিডিও তৈরীর দল সেখানেও ঝামেলা সৃষ্টি করছে।
এইসব ভিডিও তৈরীর স্থানসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারনে অনেকে কিশোর গ্যাং টাইপের ঝামেলায়ও জড়াচ্ছে।
অনেকে আবার অবসর সময়ে নিজের বাসায় শখের বসে শালীনতা বজায় রেখে নিজের প্রতিভা প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন গানের তালে সুর মেলাচ্ছে, কৌতুক এবং সচেতনতা মূলক ভিডিও তৈরী করছে।
এটি বিপত্তি হচ্ছে যখন কোন উঠতি বয়সী নারী মডেলিং এর নেশায় সরল বিশ্বাসে বা বিস্তারিত না জেনে প্রতারক কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে বিপথে পা দিচ্ছে বা উঠতি বয়সী নারীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে কোন স্বার্থান্বেষী চক্র নারীদের ক্ষতি করছে।
টিকটক-লাইকীর মাধ্যমে নিজেকে প্রচার করতে কিংবা সেলিব্রেটি হতে কিছু কিছু তরুনী এমন এমন লোকের সাথে মিশছে কিংবা টিকটক-লাইকী ভিডিও তৈরী করছে যারা ভবিষ্যতে ঐ তরুনীর জন্য বিপদ বয়ে আনছে কিংবা সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।
প্রত্যেক জিনিস আবিষ্কারের পিছনে ভাল-খারাপ জড়িয়ে আছে। মূল কথা হল কে কিভাবে সেটি ব্যবহার করছে। যারা টিকটক-লাইকী ভাল কাজে বা সচেতনতা মূলক কাজে ব্যবহার করছে তাদের নিয়ে সমস্যা নেই। আর যারা খারাপ কাজে ব্যবহার করছে তাদের নিয়ে সমস্যা।
বর্তমান সময়ে ভাল মানুষের থেকে খারাপ মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এটি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিল না। এটি বর্তমানে সামাজিক পর্যায়ে চলে আসায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিরূপ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে টিকটক-লাইকী নিয়ে আরো বড় ধরণের জঠিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমার ধারণা।
তাই স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বস্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উদ্যোগে বিভিন্ন ছোট বড় কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে উঠতী বয়সী তরুন-তরুনী এবং অভিভাবকদের একত্রিত করে বুঝাতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কি করা উচিৎ, কি করা উচিৎ নয়, কোনটি করলে অপরাধ বা অপরাধ নয়।
পাশাপাশি যেসব ভিডিও তৈরী করলে সামাজিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয় সেইসব ভিডিও তৈরী না করার জন্য সচেতনতাও সৃষ্টি করতে হবে।
অনেকে মনে করছে আমার পরিবারের কেউ টিকটক-লাইকী ভিডিও তৈরী করছে না বা কোন অনৈতিক কাজে জড়িত নয়। এন্ড্রয়েড মোবাইলের সহজ লভ্যতায় এইসবের ভিডিও দেখাদেখি ভবিষ্যতে আমার বা আপনার পরিবারের কেউ যে এইসবের সাথে জড়িয়ে পড়বে না এর নিশ্চয়তা কি ?
মনে রাখতে হবে “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে”।
আশপাশের পরিবেশ দূষিত হলে ক্রমান্বয়ে সেটা আপনার আমার পরিবারে যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই যেকোন সামাজিক সমস্যাকে নিজের ও পরিবারের সমস্যা মনে করে এর থেকে প্রতিকারের জন্য সবাইকে একত্রিত হওয়া উচিৎ। তাই যার যার সামর্থ অনুযায়ী জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
অভিভাবকদের কিছু সচেতনতা জরুরী-
- সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে এবং পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে মনোমালিন্য ও অশান্তি নিরসন করার চেষ্টা করতে হবে। কারন পরিবারে অশান্তি বিরাজ করলে ভবিষ্যতে তা সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করে।
- সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার কার সাথে মেলামেশা করছে, কি করছে ইত্যাদি বিষয়ে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
- ভবিষ্যৎ সুনাগরিক হওয়ার জন্য কি করা উচিত, কি করা উচিত নয়, কোন কাজটি ভাল কিংবা মন্দ বা দেশের প্রচলিত আইনের চোখে অপরাধ সেই বিষয়ে সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
- সংসারের আয়-রোজগারের পাশাপাশি সন্তানকে সময় দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানকে নিজ নিজ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- বর্তমানে অনেক উঠতি বয়সী তরুন-তরুনী বয়সের তারুন্যের কারনে কিংবা সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার স্বল্পতার কারনে কিংবা অন্য কোন কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকের (facebook) অযাচিত ব্যবহারের (পোস্ট-কমেন্ট-শেয়ার-লাইক) ফলে ইতোমধ্যে অনেক বড় বড় সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই নিজ সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তথা ফেসবুকে (facebook) কোন কোন বিষয়ে পোস্ট, কমেন্ট ও শেয়ার করা যাবে বা যাবে না সেই সকল বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
সচেতনতাই অনেক বড় বড় সমস্যা সমাধানে মূল ভূমিকা পালন করে। মনে রাখতে হবে পরিবার থেকে সমাজের সৃষ্টি। তাই নিজ নিজ পরিবারকে সুগঠিত করতে পারলে এবং সন্তানকে উপযুক্ত সময়ে পারিবারিকভাবে সুশিক্ষা দিতে পারলে কিংবা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে পরিবার ও সমাজ উভয়ে সুন্দর হবে। বড় বড় সামাজিক অপরাধ অনেক কমে যাবে।
#পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করতে অনুরোধ করা হল।
ধন্যবাদ।
Comments
Post a Comment