কৃত কর্মের বিচার মৃত্যুর আগেই হয়।
কৃত কর্মের বিচার মৃত্যুর আগেই হয় আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
ত্রি-শরণের অটুট শ্রদ্ধা সম্পন্ন ব্যক্তি মারা গেলে অপায়গতি হয় না। পঞ্চশীলের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি মারা গেলে অপায়গতি হয় না। শীলবিশুদ্ধি, চিত্তবিশুদ্ধি চূলস্রোতাপন্ন মারা গেলে অপায়গতি হয় না। অসংশয়, দৃষ্টিবিশুদ্ধি স্রোতাপন্ন মারা গেলে নির্বান অব্ধি অপায়গতি চির রুদ্ধ।
১০ দুশ্চরিতের লোভ জনিত যে কোন ০১টি কর্ম নিমিত্তে মারা গেলে প্রেতগতি হয়। এভাবে- মান জনিত যে কোন ০১টি কর্ম নিমিত্তে মারা গেলে অসূরগতি হয়। দ্বেষ বা হিংসা জনিত যে কোন ০১টি কর্ম নিমিত্তে মারা গেলে নিরয়গতি হয়। মোহ জনিত যে কোন ০১টি কর্ম নিমিত্তে মারা গেলে তির্যকগতি হয়।
দেশের আইন ধারাকে ভঙ্গ করলে ভঙ্গকারী যেভাবে ধারা দণ্ডের দণ্ডিত হয় ঠিক সেভাবে বললে বুঝতে সহজ হয়। আসলে অপায়গতি হবার মূল কারণ হলো লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্লেশ কর্মের কারণেই হয়। প্রত্যেকের চিত্তে এ লোভ-দ্বেষ-মোহ-মান-দৃষ্টি ইত্যাদি ক্লেশ কলুষগুলো থাকে; থাকলেও দুশ্চরিত দুষ্কর্ম না করলে অপায়গতি হবার কোন কারণ নেই। অর্থাৎ আইনের ধারা ভঙ্গ না করলে দণ্ডের ভয় থাকে না।
১০ দুশ্চরিত বলতে-
১। প্রাণী হত্যা দুশ্চরিত কর্ম।
২। চুরি দুশ্চরিত কর্ম।
৩। ব্যভিচার দুশ্চরিত কর্ম।
১। মিথ্যা কথা দুশ্চরিত কর্ম।
২। পিশুন কথা দুশ্চরিত কর্ম।
৩। পরুষ কথা দুশ্চরিত কর্ম।
৪। সম্প্রলাপ কথা দুশ্চরিত কর্ম।
১। অভিধ্যা- লোভে অন্যের জিনিসকে নিজের করা মানসিক দুশ্চরিত কর্ম।
২। ব্যাপাদ- হিংসে কাউকে ক্ষতি করা মানসিক দুশ্চরিত কর্ম।
৩। মিথ্যাদৃষ্টি- চেতনাই কর্ম। পাপ-পুণ্য কর্ম ও কর্মফলকে বিশ্বাস না করা মানসিক দুশ্চরিত কর্ম।
উদাহরণঃ যেমন- তিস্স ভিক্ষু ১০ দুশ্চরিতের যে কোন ০১টি না করলেও মোহ জনিত তির্যকগতি হয়েছে। হলেও দুশ্চরিত (কারো ক্ষতি না হওয়া) দরুন ০৭ দিন পর মুক্ত হয়ে সুগতি স্বর্গে উৎপন্ন হয়েছে।
লোভ-দ্বেষ-মোহের কারণে অপায়গতি হয় এ চেতনা কর্মের নিয়ম সকল সত্ত্বাদের জন্য সমান প্রযোজ্য।
পাপী পাপ করে, পাপী তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে কর্তার প্রভুর কাছে; দয়া করে যেন তাকে পাপ থেকে উদ্ধার করে। এ নিয়ম যেন প্রকৃতির কর্মের নিয়মের সাথে অনিয়ম।
বুদ্ধধর্ম প্রকৃতির স্বভাব ভিত্তিক ধর্ম, চিনি যেমন সকলের জন্য মিষ্টি হয় তেমনি লোভ-দ্বেষ-মোহের স্বভাবও কারো'র জন্য পরিবর্তন হয় না।
অলোভ চিত্তে দান করলে, অদ্বেষ চিত্তে শীল পালন করলে, অমোহ চিত্তে ভাবনা করলে- পুণ্য-ধ্যান-জ্ঞান-প্রজ্ঞা অনুসারে সত্ত্ব যথা উপযুক্ত স্থানে গমন করে।
লোভ চিত্তে কারো'র জিনিস নিলে। দ্বেষ চিত্তে কাউকে অত্যাচার করলে। মোহ চিত্তে কাউকে যা তা করলে সে যেবা হোক না অপায়গতি প্রাপ্ত হয়। নিম তিক্ত যে খায় না তার জিহ্বায় তিক্ত হবে। পাপ-পুণ্যের স্বভাবের ফল কখনো পরিবর্তন হয় না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
কারো কারো ধারনা মতে- কর্ম কেবল বৌদ্ধদেরকে বিচার করে, অন্যদের করে না। এমন ধারনা মোটেই ঠিক না। কর্মের স্বভাব সকল সত্ত্বাদেরকে যথাসময়ে সঠিক বিচার করে বলে বুঝে নিতে হবে।
মানুষের আইনের ধারা অনুসারে বিচারক যখন তখন বিচার করলেও কৃতকর্ম স্বভাবের বিচার মৃত্যুর আগে হয়। যেমন- দেবদত্ত। অজাতশত্রু। চিঞ্চা। নন্দমানব। নন্দযক্ষ সহ আরো কতক উদাহরণ রয়েছে। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
Comments
Post a Comment