অপার্থিব কল্পনা কখন সমস্যা সৃষ্টি করে।

অপার্থিব কল্পনা যখন সমস্যা। Virtual fantasy।


অপার্থিব কল্পনা যখন সমস্যা। Virtual fantasy।

অপার্থিব কল্পনা বা ভার্চুয়াল ফ্যন্টাসি হলো অনলাইন ভিত্তিক স্বপ্ন জগত। যেখানে যা চাই তা পাই রকম অবস্থা। এই পাওয়ায় বাস্তবতার স্বাদ নেই। এর সাথে বাস্তবতার আদৌ কি মিল আছে ? এই জগতটি আমাদের তৈরী একটি নতুন স্বপ্নজগত। 

এর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। থাকলেও অনেক কম। ধরুন কেউ রসগোল্লার ছবি শেয়ার করল, আমি আপনি তা দেখে মিষ্টি, ওয়াও ইত্যাদি লোভনীয় কমেন্ট ও লাইক করছি। তাতে কার কি লাভ হচ্ছে ?

আসলে অতিমাত্রিক ভার্চুয়াল আসক্তির ফলে অনেকে নিজের বাস্তবতাকে, নিজের সৃজনশীল শক্তিকে দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। যেই সমস্যাটি কাছের কারো কিংবা পরিবারের কারো সাথে শেয়ার করে সমাধান করা সম্ভব সেই কাজটি অনেকে ফেসবুকের পাতায় কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় শেয়ার করে সমাধান চাইছে। 

অনেক ক্ষেত্রে সেই সমাধান সঠিক না হওয়ায় নিজেকে বিরম্বনার স্বীকার হতে হচ্ছে এবং নিজের দুর্বলতা অনের কাছে সহজে প্রকাশ পাচ্ছে। 

প্রতিনিয়ত মানুষ পাশের বন্ধু-বান্ধবের তুলনায় দূরের ভার্চুয়াল বন্ধু-বান্ধবের সুবিধা-অসুবিধা, কুষলাদির খবর নিতে ভুলছে না। যার সাথে হয়তো এই জন্মে কখনো দেখা হবে না, কিংবা মরে গেলেও সেই বন্ধু সমবেদনা জানাতে আসবে না। 

ভার্চুয়াল লাইফে সবই সুন্দর ও সহজে লাভ করা যায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলি মেটাতে অনেক বেগ পেতে হয়। কারণ এটি বাস্তব। প্রতিদিন খাওয়া-দাওয়া, গোসল, বাজার-সদাইসহ অন্যান্য কাজ-কর্ম করতে পরিশ্রম ও মেধা এবং সৃজনশীলতার প্রয়োজন হয়। 

ভার্চুয়াল লাইফে বসে থাকলে সেসব প্রয়োজনীয় কাজগুলি কেউ করে দেয় না। 

ভার্চুয়ালে খবর নেয় ভাত খাওয়া হয়েছে ? 

রান্না হয়েছে ? 

ঘুবাবেনা ? 

ঘুম থেকে কখন উঠেছ ? 

কি করছ ? 

চা খেয়েছ ? ইত্যাদি ছাড়া আর তেমন কিছু পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় না।

ভার্চুয়াল লাইফের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খবরা-খবর নেওয়া ও পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সহজ হয়েছে। দৈনন্দিন অনেক কাজ অনলাইন নির্ভর হওয়াতে জীবন যাত্রার মানও সহজ হয়েছে। 

তাই বলে ভার্চুয়াল জগতকে অতি প্রাধান্য দিতে হবে তা নয়। অনেকে এই ভার্চুয়াল জগতকে অতি মাত্রায় প্রাধান্য দেওয়ায় নিজের বাস্তবতা ও সৃজনশীলতাকে হারাতে বসেছে। 

ভার্চুয়ালে সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো থাকে, বাস্তবে তা থাকে না। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং নিজেকে অন্য মানুষের প্রয়োজনে লাগাতে বাস্তবতা অতীব জরুরী। 

ভার্চুয়াল জগতে বসে বসে মানুষের দুঃখের ছবি শেয়ার করার চাইতে পাশের বা প্রতিবেশী দুঃখী মানুষকে যথটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগীতা করলে সমাজের দুঃখী মানুষের অনেক উপকার হয়।

যারা অতিমাত্রায় ভার্চুয়াল ফ্যান্টাসিতে আসক্ত তারা সবসময় কিটখিটে মেজাজের হয়। কারণ তারা ভার্চুয়াল ফ্যান্টাসিকে বাস্তবে রূপ দিতে চায়। যখনই বাস্তবে রূপ দিতে চায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। সেই সমস্যা সমাধান করতে না পারায় অনেকে মানসিক সমস্যায় পতিত হয়। 

তাই ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে দূরে থাকতে নিজেকে সৃজনশীল হতে হবে। পরিবারকে সময় দিতে হবে, কাছের ভাল বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। সৃষ্টিশীল কাজের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। 

ভার্চুয়াল লাইফে বসে বসে অন্যের সফলতায় লাইক শেয়ার করার পাশাপাশি নিজেকেও সেই অনুযায়ী যোগ্য হওয়ার জন্য অধ্যয়ন ও শ্রম দিতে হবে। নিজের দক্ষতা ছাড়া কখনো প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না। 

একদিনে এই ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। ক্রমান্বয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। অবসরে পরিবার, প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, গাছ লাগানো ইত্যাদি কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।

#পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন। 

ধন্যবাদ। 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।