বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের জন্য কিছু ব্যক্তিগত পরামর্শ-২০২৪

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের জন্য কিছু ব্যক্তিগত পরামর্শ-২০২৪

 

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের জন্য কিছু পরামর্শ-২০২১।

বহুল প্রতিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ২০২৪ প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত সময়ে সারা বাংলাদেশে একযোগে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে। 

আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রার্থীদের সুবিধার্থে কিছু ব্যক্তিগত পরামর্শ শেয়ার করা হল। আশাকরি পোস্টটি অনেকের উপকারে আসতে পারে।  

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য অন্যান্য সরকারী চাকরির মত কিছুদিন পূর্বে অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অত্যন্ত সতর্কতার সহিত প্রার্থীকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার সময় ভুল হলে বা কোন বিষয় বাদ দিলে বা এড়িয়ে গেলে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ হতে বাতিল হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান।

পরবর্তীতে, আগ্রহী প্রার্থীকে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য ডকুমেন্ট নিয়ে সরাসরি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে এবং নির্ধারিত স্থানে বা পুলিশ লাইনে উপস্থিত হয়ে বাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। 

সেজন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ যাবতীয় ডকুমেন্টের মূলকপি আগেভাগেই সংগ্রহ করে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টের অনুলিপি বা ফটোকপি করে প্রথম শ্রেণীর গ্যাজেটেড অফিসারদ্বারা সত্যায়িত করে রাখা উচিত।

কিভাবে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হয় ?

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রার্থীকে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনে বাচাইকৃত প্রার্থীদের মাঠ পর্যায়ে কয়েকটি ধাপে প্রাথমিকভাবে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষা করা হয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ জাতীয়তা প্রমাণ সনদপত্রগুলি প্রাথমিকভাবে যাচাই বাচাই করা হয়। 

শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষার মধ্যে প্রার্থীর বয়স, উচ্চতা, বুকের মাপ, দৃষ্টিশক্তি, দৌঁড়ঝাপসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হয়।  

মাঠ পর্যায়ে শারীরিক যোগ্যতা বা ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় এবং ডাক্তার কর্তৃক প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ ফিটনেস পরীক্ষা করানো হয়। 

মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শারীরিক যোগ্যতা বা ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী অন্যান্য পরীক্ষা সমূহ কোনটি আগে নেয়া হবে বা কোনটি পরে নেয়া হবে তা নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। 

তবে বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রার্থীর মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক ও শারীরিক যোগ্যতা বা ফিটনেস পরীক্ষা প্রথমেই গ্রহণ করা হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তীতে অন্যান্য পরীক্ষাগুলি নিয়মানুযায়ী নেয়া হয়। 

আরেকটি বিষয় হলো বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রার্থীকে (পুরুষ বা মহিলা) অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং সাধারণ প্রার্থীর বয়স ১৮-২০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে কোটা ভিত্তিক প্রার্থীর বয়সের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকবে। 

আগ্রহী প্রার্থীদের কি কি বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত ?

আগ্রহী প্রার্থীকে যেসব বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত তা ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলঃ

  • প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্রের মূলকপি (নম্বরপত্র, প্রশংসাপত্র, সাময়িক সনদপত্র ইত্যাদি) এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান বা পৌরসভা এলাকা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, চারিত্রিক সনদপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য সনদপত্রের অনুলিপি করে প্রথম শ্রেণীর গ্যাজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করে রাখা উচিত। যারা আমাদের দেশের প্রচলিত বিভিন্ন কোটার আওতাভুক্ত তাদের নির্ধারিত কোটার সনদপত্রও সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন।
  • ৮/১০ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি প্রথম শ্রেণীর গ্যাজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করে সংগ্রহে রাখুন। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করতে পারবেন। 
  • যেহেতু বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার প্রথমে এবং শেষে চূড়ান্ত ফিটনেস পরীক্ষা নেয়া হবে সেহেতু নিজেকে ফিট রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। তাই নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখার চেষ্টা করুন। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আগ পর্যন্ত নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখতে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং দৈনিক কিছু সময় দৌঁড়ঝাপ বা হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
  • বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য পূর্বে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকবে। 
  • এবার আসি লিখিত পরীক্ষার বিষয়েঃ বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় ইতিপূর্বে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার (এসএসসি) মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে বাংলা, ইংরেজী, গণিত, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের উপর লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। এবারও হয়তো এর ব্যতিক্রম হবে না (নিয়োগ কর্তৃপক্ষ চাইলে হতেও পারে)। তাই শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী এসব বিষয়ে ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন বা অধ্যয়ন করুন।  
  • যেহেতু পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে সেহেতু খুব শিঘ্রই বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে আপাতত বাতিল বা স্থগিত করুন। বিশেষ করে যারা মহিলা নিয়োগ প্রার্থী তারা নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের পূর্বে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা স্থগিত রাখুন। পুরুষ বা মহিলা উভয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করার পর চাকরির নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করতে পারবেন। তাই বিয়ে নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই।  
  • আর একটি বিষয় না বললেই নয়, যারা বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের উচিৎ ধুমপানের অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দেয়া এবং ধুমপান এড়িয়ে চলা। কারণ কোন মাদকাসক্তকে চাকুরীতে নিয়োগ করা হয় না। হয়তো চূড়ান্ত ডাক্তারী পরীক্ষায় ডোপ টেস্ট করানো হতে পারে। তাই এখনই সতর্ক হোন। মাদক মুক্ত থাকুন, মাদককে না বলুন। 
  • যেকোন সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত কিনা তা যাচাই করা হয়। যেকোন সরকারী চাকরি করার ইচ্ছা থাকলে সকল প্রকার বেআইনী কাজ এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” তাই সময় থাকতে অসৎ সঙ্গ বা খারাপ সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। মাদক ও নারী নির্যাতনসহ যেকোন অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকুন।  

নিয়োগ প্রার্থীদের সুবিধার্থে উপরোক্ত ব্যক্তিগত পরামর্শগুলি শেয়ার করা হলো, যা সচরাচর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসবের বাইরে অন্যান্য শর্তাদি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

#পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ। 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।