বিভাজ্যধর্ম বনাম মিথ্যাদৃষ্টি যুক্তিখণ্ডন মানে কি।

বিভাজ্যধর্ম বনাম মিথ্যাদৃষ্টি যুক্তিখণ্ডন আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

বিভাজ্যধর্ম বনাম মিথ্যাদৃষ্টি যুক্তিখণ্ডন দেশনা।


নির্বাণ সম্পর্কিত সত্য জ্ঞান না থাকলে মিথ্যাদৃষ্টি হয়। নাম-রূপ নিরোধ সত্যকে নির্বাণ বলে। তৃষ্ণা ক্ষীণবীজকে নির্বাণ বলে। নির্বাণ পরম নিবৃত্তধাতু। নির্বাণে কিচ্ছু নেই ধারনা করলে উচ্ছেদ মিথ্যাদৃষ্টি।

নির্বাণকে সাগর, শহর, নগরের মত ধারনা করলে শাশ্বত মিথ্যাদৃষ্টি। নির্বাণ কি, মিথ্যাদৃষ্টি কি এ তত্ত্বকে বুঝার যথাভূত জ্ঞান না থাকলে মিথ্যাদৃষ্টি হয়।

নির্বাণে তৃষ্ণা শেষ হয়।
নির্বাণে নাম-রূপ শেষ হয়।
নির্বাণে কিচ্ছু নাই ধারনা করলে উচ্ছেদদৃষ্টি হয়।

তাই বুদ্ধের দেশিত যথাধর্ম নির্বাণকে জানতে হয়। উক্ত দু'দৃষ্টি থেকে বের হয়ে মধ্যপন্থা মার্গসত্য পথে নির্বাণে পৌঁছানো যায়। যে ধরণ অঢেল দান করুক না দৃষ্টিগত দান হলে নির্বাণে পৌঁছতে পারে না। দান শীল পুণ্যকর্ম নির্বাণে হেতু হয় ঠিক তবে শাশ্বতদৃষ্টি উচ্ছেদদৃষ্টি জড়িত থাকলে নির্বাণের হেতু হয় না।

প্রতিত্যসমুৎপাদ নিদানে অবিদ্যা জনিত পাপ, পুণ্য, ধ্যান অভিসংস্কার কর্ম পরবর্তী জন্মে কর্মানুসারে প্রতিসন্ধি বিজ্ঞাণ হয়। নির্বাণ হয় না। বিদর্শন জ্ঞানই একমাত্র নির্বাণ গামিনী পথ। তাই বোধিসত্ত্বগণ অন্ততঃ বিদর্শন জ্ঞান ভিত্তিতে পারমী পূরণ করে থাকেন।

কে ধর্মশ্রবন করে?
নাম-রূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা দুঃখসত্য ধর্মশ্রবন করে। কোত্থেকে এসে শ্রবন করে? অবিদ্যা, সংস্কার থেকে এসে শ্রবন করে। মানুষ বলতে অতীতে অবিদ্যা, সংস্কার কারণে নাম-রূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা হয়েছে বললে ভুল হবে না। অতীত দু'টির কারণে বর্তমান পঞ্চফল হয়। এ কার্যকারণকে বুঝলে বিচিকিৎসা (সংশয়) মরে যায় বা ছিন্ন হয়। পঞ্চফল উৎপন্নের মাঝে আমি নেই এরুপ জানলে মিথ্যাদৃষ্টি মরে।

নির্বাণকে যে প্রত্যক্ষ করেছে সেই বলতে পারে। অরহতগণ নির্বাণকে প্রত্যক্ষ করেছেন তাই নির্বাণের কথা মানব মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন।


বুদ্ধ ও কোন এক ব্রাহ্মণের প্রশ্ন-উত্তরঃ-

প্রশ্ন- বুদ্ধ! নাম-রূপ নিত্য কিনা?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! নিত্য বলি না। (শাশ্বতদৃষ্টি)।


প্রশ্ন- বুদ্ধ! নাম-রূপ ছিন্ন হয়ে যায় কিনা?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! ছিন্ন হয়ে যায় বলি না। (উচ্ছেদ দৃষ্টি)।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! নাম-রূপ শেষ হয় কিনা?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! শেষ হয় বলি না।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! নাম-রূপ শেষ হয় না?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! শেষ হয় বলি না।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! প্রাণী মারা গেলে পুন হয় কিনা?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! প্রাণী মারা গেলে পুন হয় বলি না। (সত্ত্ব আত্ম জীব নয়)।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! প্রাণী মারা গেলে পুন কেউ হয় কেউ হয় না এমন কিনা?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! এমনও বলি না।

প্রশ্ন- প্রাণী মারা গেলে পুন উৎপন্ন হবে কি হবে না?
প্রশ্ন- ব্রাহ্মণ! এমনও বলি না। (প্রাণী বলতে নেই)।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! আপনি এ দৃষ্টিকে গ্রহণ না করলে। আমি এ দৃষ্টি গ্রহণ করলে কি হতে পারে?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! মিথ্যাদৃষ্টি হবে।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! তাহলে আপনার মিথ্যাদৃষ্টি আছে কি?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! এ মিথ্যাদৃষ্টিকে অপরাজিত বোধিমূলে সমূলে তুলে ফেলেছি।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! তাহলে আপনার গ্রহণ করা বিভাজ্যধর্মকে জানতে পারি কি?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! বিজ্ঞাণ, নাম-রূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞাণ, নাম-রূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা নিরোধ হয় এগুলো আমার বিভাজ্যধর্ম। এ ধর্মগুলো উদয়ব্যয় ধর্মী বলে জানো।

প্রশ্ন- বুদ্ধ! এ উদয়ব্যয় ধর্মকে গ্রহণ করলে কি হতে পারে?
উত্তর- ব্রাহ্মণ! এ উদয়ব্যয় ধর্মকে গ্রহণ করলে তৃষ্ণা, উপাদান (দৃঢ়াস্রব) কর্মভব (মানুপাদান- মান শাসিত কর্ম ) হয়। দৃষ্টোপাদান- মিথ্যাদৃষ্টি শাসিত কর্ম ) হয়। এ তৃষ্ণা, মান, দৃষ্টি পপঞ্চধর্ম (সংসার দীর্ঘ দীর্ঘকারী) নিরোধ হয়। ব্রাহ্মণ এটাই আমার বিভাজ্যধর্ম।

বৌদ্ধ বিভাজ্যধর্ম হল- দুঃখসত্যকে মার্গসত্য দ্বারা জানার ধর্ম। নাম-রূপকে জানার ধর্ম। নাম-রূপকে উদয়ব্যয় ভাবনা করলে পপঞ্চধর্ম মরে। পপঞ্চ মরে গেলে সর্বদুঃখ নিরোধ হয়। এটিই বুদ্ধের ধর্ম।

নির্বান হল পপঞ্চধর্ম নিবৃত্তি। পপঞ্চধর্ম হল সংসার দীর্ঘকারী ধর্ম।

সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।