প্রাপ্তি অনুমোদন সাধুবাদ প্রদানের পুণ্যফল কেমন হয়।
প্রাপ্তি অনুমোদন সাধুবাদ প্রদানের পুণ্যফল দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের।
বুদ্ধ জীবদ্দশায় শ্রাবস্তীতে এক শ্রেষ্ঠী কন্যা তার স্বামী বুদ্ধের নিকট ধর্মশ্রবন করে চিন্তা করলেন যে, আমার এই শ্রুতধর্ম গৃহবাসে থেকে যথাযথ পালন করা অসম্ভব। এই ভেবে তিনি একজন পিন্ডুপাতিক ধুতাঙ্গধারী স্থবিরের নিকট গিয়ে প্রব্রজিত হয়েছিলেন।
অনন্তর তার স্ত্রী কে স্বামী বিহীনা জেনে রাজা প্রসেনজিৎ, স্বীয় অন্তঃপুরে আনয়ন করলেন। রাজা একদিন নীলোৎপল নিয়ে অন্তঃপুরে প্রবেশ করে প্রত্যেক জনকে একটি করে নীলোৎপল দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী বিহীনা স্ত্রী লোককে দুইটি দেওয়া হইল। সেই স্ত্রী দুইটি পুষ্প পেয়ে প্রথমে প্রফুল্লিত হয়েছিলেন। আবার ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে ক্রন্দন করেছিলেন।
তার দুই রকম অবস্থা দেখে রাজা তাহাকে ডেকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী লোকটি উত্তর বললেন যে, প্রথমে আমি দুইটা পুষ্প পেয়েছি বলে সন্তুষ্ট হয়েছিলাম কিন্তু পরে ঘ্রাণ নিয়ে দেখলাম নীলোৎপলের সুগন্ধ আমার স্বামীর মুখের সুগন্ধি ন্যায়। এই কথা মনে হওয়ার আমি ক্রন্দন করেছিলাম। কিন্তু স্ত্রী লোকটি তিন বার বলার পর ও রাজা তার কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না।
পরদিন রাজা অন্তঃপুরে সমস্ত রকমের পুষ্প মালা বিলেপনাদি সুগন্ধ দ্রব্য এনে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সংঘ আসন সজ্জিত করে মহাদান দিলেন। ভোজনের কার্য শেষ হলে রাজা স্ত্রী লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার স্বামী কোন স্থবির? "ইনি বলে উত্তর দিলে রাজা তখন ভগবা কে অভিবাদন করে বললেন, প্রভু! আপনি ভিক্ষু সংঘকে নিয়ে বিহারে গমন করুন, এই স্থবির আমাদের দানের অনুমোদন করবেন। ভগবা সেই ভিক্ষুকে রেখে বিহারে চলে গেলেন। অতঃপর স্থবির দানানুমোদন করে আরম্ভ করলে রাজার সমস্ত অন্তঃপুর সুগন্ধে ভরে গেল। তখন রাজা "স্ত্রী লোকটি কথা সত্যই বলেছিল" ভেবে রাজা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
পরদিন আবার রাজা ভগবা সমীপে গিয়ে সেই সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, ভগবা তদুত্তরে বলেছিলেন যে, এই ভিক্ষুটি অতীত জন্মে ধর্মশ্রবন করার পর "সাধু সাধু সাধু" বলে সাধুবাদ প্রদান করতে করতে একাগ্রচিত্তে ধর্মশ্রবন করতেন। ফলে তার সাধুবাদের পুণ্যফলে স্থবির মুখ থেকে সুগন্ধ নিসৃত হত। আহো! সাধুবাদ দেওয়ার কি মহৎফল! তাই সকলে পূণ্য কর্ম করলে সাধুবাদ প্রদান করা উচিৎ।
"নবকপ্প সুতধম্মং, অট্ঠকপ্পঞ্চ যাচিতো।
একো কপ্পো অনুমোদনা, দেসিতো চ অসঙ্খেয্যো"-
অনুমোদনের পুণ্যফল-
ধর্ম- শ্রবন করলে ০৯ কল্প।
প্রার্থনা করলে ০৮ কল্প।
সাধুবাদ প্রদান করলে ০১ কল্প।
ধর্মদান করলে অসংখ্যেয় কল্প অপায় গতি হয় না।
১০ প্রকার মহাপুণ্যক্রিয়া কর্মঃ
(১) দান- ত্যাগ করা।
(২) শীল- কায়-বাক্য-মনকে সংযত করা।
(৩) ভাবনা- সমথ, বিদর্শন ভাবনা করা।
(৪) অপচাযন- শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শন, গৌরব করা।
(৫) বেয্যাবচ্চ- কায়িক,বাচনিক,আর্থিক সহযোগিতা করা। স্বেচ্ছাসেবা করা।
(৬) পত্তিদান- প্রাপ্তি পুণ্যদান করা।
(৭) পত্তানুমোদন- অন্যের প্রদত্ত পুণ্যকে অনুমোদন, সাধুবাদ প্রদান করা।
(৮) ধর্মশ্রবন করা।
(৯) ধম্মদেসনা করা।
(১০) দিট্ঠিজুক্ম্ম- ঋজুকর্ম- কর্ম ও কর্মফলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নৈর্বানিক পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা।
সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
#সাধু-সাধু-সাধু।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
Comments
Post a Comment