পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।


Patenga Sea Beach. আজকে আমি চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। এই পর্যটন কেন্দ্রে কখন যাবেন, কিভাবে যাবেন, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা, ভৌগলিক অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।


বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি হলো চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এটি চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকায় অবস্থিত। বন্দরনগরী খ্যাত চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। এই সমুদ্র সৈকত দিন দিন আধুনিকায়ন ও ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। 


যারা আজ থেকে ৫/৭ বছর পূর্বে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘুরে গেছেন তারা আধুনিকায়নকৃত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পুনরায় ভ্রমণে আসলে নবরূপে সজ্জিত সমুদ্র সৈকত দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাবেন। ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষজন চিত্তবিনোদনের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন।

ভৌগলিক অবস্থানঃ-

ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি। কর্ণফুলী নদী রাঙামাটি পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কাছে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ০৫ কিলোমিটার। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কখন যাবেন এবং কি কি দেখতে পাবেন ?

প্রতিদিন বিকাল বেলা ও ছুটির দিনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রচুর প্রকৃতি প্রেমী লোকের সমাগম হয়। তবে সূর্যোদয় দেখার জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সৈকতে চলে আসতে হবে। বিকাল বেলা জোয়ার আসার পূর্বে ভাটার সময় চাইলে পানিতে নেমে ও সমুদ্রের বালুময় তীরে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। তবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত প্রসস্থ না হওয়ায় সাঁতার কাটা ও পানির গভীরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

 

বিকাল বেলা নির্দিষ্ট হারে ভাড়ার বিনিময়ে স্পীড-বোটে করে সমুদ্রে বেড়ানোর সুব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি ভাড়ার বিনিময়ে তীরঘেষা বালুময় প্রান্তরে সী-বাইক এবং ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ আছে। পতেঙ্গা সমুদ্রে বড় বড় জাহাজের চলাচল কিংবা মাথার উপর দিয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড়ে যাওয়া বিমানও দেখা যায়। 


সাধারণত বিকাল গড়ার সাথে সাথে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার আসার সাথে সাথে সমুদ্রের তীরঘেষা বালুময় প্রান্তর অনেকটা তলিয়ে যেতে শুরু করে। যার ফলে বালুময় প্রান্তরে আর হাঁটাহাঁটি করা যায় না। জোয়ারের ফলে বাঁধে থাকা বড় বড় পাথরে ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য আধুনিকায়ন করা উচু বাঁধ থেকে দেখতে খুবই ভাল লাগে। 


পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য আরো মনোরম। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন ও পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করার কারনে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনসমাগম হতে দেখা যায়। 


পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ আপাতত সবার জন্য উন্মুক্ত। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চলমান আধুনিকায়নের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর হয়তো নির্ধারিত টিকেটের ব্যবস্থা করা হতে পারে। 


এর একটি বড় কারণ হতে পারে এটির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পরিচালনা। অনেকে আছে যারা সমুদ্র ভ্রমণের সময় বিভিন্ন রকম অপচনশীল প্ল্যাস্টিকের বজ্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে যেখানে সেখানে ফেলে চলে যায়, যা সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করছে। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের খাবার ও থাকার ব্যবস্থাঃ-

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ মুখের বাম পাশে আবাসিক হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা আছে। তাছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ (Hotel Agrabad), জিইসি মোড় (The Peninsula, Chittagong), খুলশী, চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউরী (Radisson Blu Chittagong) সহ বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থানে ভাল মানের আবাসিক হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা আছে।


আধুনিকায়নকৃত সমুদ্র সৈকতের সাথেই গড়ে উঠেছে খাবারের দোকানসহ অনেক দোকান-পাট ও শপিং মার্কেট। সুস্বাদু, জিভে জল আনা স্ট্রিট ফুড এখানে পাওয়া যায়। এখানে জনপ্রিয় খাবার হল কাঁকড়া ভাজা, কুড়কুড়ে পিয়াজু। সৈকতে থাকা শপিং মার্কেটে ঘুরে ফিরে শিশুদের খেলনা সহ নিজের পছন্দের কেনাকাটা করতে পারবেন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আশপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহঃ-

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সন্নিকটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (Shah Amanat International Airport Chittagong), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগামী রাস্তার মুখে নেভাল সীবিচ (Naval Sea Beach) ও প্রজাপতি পার্ক (Butterfly Park) রয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কখনো বেড়াতে আসলে একই সাথে এসব স্পট সমূহ ঘুরে দেখতে পারবেন।

কিভাবে যাবেনঃ-

চট্টগ্রাম মহানগরীর যেকোন বাস স্ট্যান্ড হতে বাস বা সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবহার করে পতেঙ্গা সীবিচ ভ্রমণ করতে পারবেন। তাছাড়াও, চট্টগ্রাম মহানগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়, দামপাড়া-ওয়াসা, টাইগারপাস-দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ (১০নং সিটি বাস) এবং একে খান, নিউমার্কেট সহ চট্টগ্রাম মহানগরীর আপনার সুবিধাজনক যেকোন অবস্থান হতে লোকাল বাস কিংবা রিজার্ভ সিএনজি অটোরিক্সা বা অন্যান্য গাড়ীযোগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বা পতেঙ্গা সীবিচ যেতে পারবেন।


পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন। 

ধন্যবাদ। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকদের বাস্তব রূপ দেখতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।