কর্কশ বাক্য জনিত আম্রপালির কঠিন কর্ম বিপাক কেমন ছিল।

কর্কশ বাক্য জনিত অম্বপালির (আম্রপালি) কঠিন কর্মের বিপাক ভোগ আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

কর্কশ বাক্য জনিত আম্রপালির কঠিন কর্মের বিপাক ভোগ দেশনা।



অম্বপালি বৈশালী রাজ্যে রূপের অনন্যা খ্যাতি সম্পন্না এক গণিকা। তিনি সিখী বুদ্ধের সময়ে ভিক্ষুনী প্রব্রজিতা, মাতৃগর্ভ প্রতিসন্ধিকে বিরাগ হয়ে উপপাতিক জন্ম লাভের জন্য প্রার্থনা করার ফলে ইহজন্ম গৌতম বুদ্ধ সময়ে বৈশালী রাজ্যে রাজার আম্রকাননে আম গাছের শাখায় উপপাতিক জন্ম হয়েছিল।

এই নারী ফুস্স বুদ্ধের সময়ে বুদ্ধের বোন হয়েছিলেন। সেই সময়ে ইনি রূপের অপরূপা হওয়ার জন্য প্রার্থনা করে ইহজন্মে রূপের অতুলনীয়া হলো।

আম গাছের শাখায় জন্ম হবার কারণে অম্বপালি নামে ডাকা হয়। অম্বপালির চেহারা এতই সুন্দর তাকে দেখে কেউ তৃপ্ত হতো না। বৈশালী লিচ্ছবী রাজকুমাররা কেউ বলে আমি নেবো, সেই বলে আমিই নেবো এই বিতর্কতে পরেছিল।

তখন বৈশালী গণ্যমান্যরা এই বিতর্ক নিরসনের জন্য মিমাংসা করে দিলো অম্বপালি সব রাজকুমারের গণিকা এবং নির্ধারণ করে দিলো- তার কাছে একবার গেলে তাকে গুণতে হবে ৫০ কাহন।

অম্বপালি মগধাধিপতি বিম্বিসার রাজকুমারের সাথে গোপন প্রেমে একপুত্র সন্তান হয়েছিল। পুত্রও পরবর্তী সময়ে বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজিত হলে কোণ্ডণ্য স্থবির নামে পরিচিত ছিলেন।

অম্বপালি গণিকা বুড়িবয়সে বুদ্ধের সাথে দেখা পেয়ে বুদ্ধকে পিণ্ডদান পূর্বক দেশনা শ্রবন করেছিল। নিজের আম্র কাননেও বিহার নির্মাণ করে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন।

নিজের পুত্র কোণ্ডণ্যের মুখে ধর্মশ্রবন করে ভিক্ষুনী হয়েছিলেন। নিজের জরাজীর্ণ দেহকে দেখে বিদর্শন ভাবনা অনুশীলন করে অচিরে প্রতিসম্ভিদা সহ ষড়াভিজ্ঞা প্রাপ্ত অরহত হয়েছিলেন। অতপর নিজের অতীত জন্মে কৃত দুষ্কর্মের বিপাক তথা গণিকাবৃত্তি হওয়ার কাহিনীকে খুলে বলেছিলেন যে,

অতীত জন্মে কোন একদিন সহ ব্রহ্মচারী ভিক্ষুনীদের সাথে চৈত্য প্রদক্ষিণ করে পূজা করার সময় সামনে গিয়ে থাকা এক অরহত থেরী হাঁচি করার সময় চৈত্যের প্রাঙ্গণে নাক থেকে শিকনি শ্লেষ্মা ঝরছিল, সেটি অরহত ভিক্ষুনী না দেখে প্রদক্ষিণ পথে রয়ে গেলো। সেটিকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে কে এ বেশ্যা এখানে থুথু ফেলেছে বলে কর্কশ গালমন্দ কথার বাণ ছুড়েছিল।

এরূপ কর্ম বিপাকের কারণে নরকে পতিত হয়ে, নরক থেকে উঠে এসে ১০ হাজার জন্ম পর্যন্ত বেশ্যাগিরি গণিকা হতে হয়েছিল।

কর্কশ গালমন্দ অশ্লীল বাক্যের বাণ থেকে বিরত থাকা। কোনভাবেই ধর্ম, জাত, জ্ঞাতি, গোষ্ঠী, মা-বাবার ও লজ্জার বিষয় নিয়ে অশ্লীল অশালীন কথা না বলার সতর্ক থেকেই অপ্রমাদের সহিত নির্বাণ অবধি হিত সুখকর কর্ম সম্পাদন করা।

আম্বপালিকে ০১ সেকেন্ড গালমন্দ বাচনিক পাপকর্মের বিপাক ভোগ করতে হলো নির্বাণ অবধি।

চেতনা উত্তম তো! নির্বান অবধি সবই উত্তম ফল। চেতনা মন্দ তো! সবই মন্দ ফল। কপাল দোষ না চেতনার দোষ। সাবধানে কর্ম করা উচিত।
সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-২৭ জুন ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।