অপায়গতি হবে না নিশ্চিন্ত থাকুন।

অপায়গতি হবে না নিশ্চিন্ত থাকুন আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

অপায়গতি হবে না দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের।


বুদ্ধ কোশল রাজ্যে বেলুদ্বারেয্য নামক ব্রাহ্মণ গ্রামে  পরিষদ সহ আগমন করেন। বুদ্ধ আগমনের কথা শুনে গ্রাম প্রধান, ব্রাহ্মণসহ গণ্যমান্য সকলে বুদ্ধের সমীপে উপস্থিত হন। 

তখন গ্রামে এক মুরব্বী ব্রাহ্মণ তার জানার বিষয় জিজ্ঞেস করার জন্য অনুমতি চাইলে বুদ্ধ তাকে অনুমতি দিলেন।

ভগবান বুদ্ধ! আপনাদের মত গৃহত্যাগ করে ভাবনা অনুশীলন করার সময় সুযোগ হয় না। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা পরিবারকে নিয়ে মনুষ্য সুখে হাসি মুখে থাকতে চাই। মরণের পরেও আবার যেন মনুষ্য সুখ, দিব্যসুখগুলো লাভ করতে পারি বলে বললেন।

আপনারা সবাই সহানুভূতিশীল হোন। সহানুভূতি বলতে-

(১) নিজেই হত্যা শিকার পছন্দ না করলে অন্যকেও হত্যা না করা।

(২) নিজের জিনিস চুরি পছন্দ না করলে কারোর জিনিস চুরি না করা, অন্যায়ভাবে না নেওয়া।

(৩) নিজেই নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পরকীয়া পছন্দ না করলে নিজেও পরকীয়া না করা।

(৪) নিজেই মিথ্যা কথা পছন্দ না করলে অন্যকেও মিথ্যা কথা না বলা।

(৫) নিজেই পিশুন (প্রিয় বিচ্ছেদ) কথা পছন্দ না করলে কাউকে ঝগড়া বাধানোন কথা না বলা।

(৬) নিজেই পরুষ (গালমন্দ,  কর্কশ) কথা পছন্দ না করলে কাউকে কর্কশ গালমন্দ কথা না বলা, কটুক্তি ভাষা লেখালেখি না করা।

(৭) নিজেই অনর্থকর সম্প্রলাপ কথা পছন্দ না করলে কাউকেও অসার মূল্যহীন অনর্থকর কথা না বলা। এগুলো থেকে বিরত হতে পারলে নিজের ইচ্ছিত সম্যক সঙ্কল্প পূর্ণ হয়।

বুদ্ধের সময়ে গৃহী অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী, বিম্বিসার রাজার মত সাধুসজ্জন অনেকেই স্বর্গবাসী হয়েছেন।

তাই সহানুভূতিশীল হওয়া। সহানুভূতিশীল চিত্ত সাধুসজ্জনের চিত্ত। অত্যন্ত উত্তম চিত্ত। এমন চিত্ত অধিকারী সাধুসজ্জনকে মহৎব্যক্তি বলে। এরুপ মহৎব্যক্তি সুগতি সদ্গতি লাভে নিশ্চিত হয়।

পরিবার, পাড়াপড়শি, কাজে কর্মে শহরে নগরে যেখানেই হোক সবার সাথে সহানুভূতিশীল হয়ে মৈত্রচিত্তে সহবস্থান করতে পারলে এ মর্ত্যলোক স্বর্গের তুল্য হবে।

সহানুভূতিশীল চিত্ত অসন্তুষ্ট চিত্তকে দুর্বল থেকে দুর্বল করে। মা-বাবা সন্তানদের প্রতি অসন্তুষ্ট হলে ওহ্ আমিও ছোটকালে এমন ছিলাম এরুপ সহানুভূতিশীল হয়ে পরিবার বান্ধব, পরিবেশ বান্ধব উক্ত বুদ্ধের ধর্মোপদেশ গুলোকে শরণ করা। গুরুজন শিষ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হলে আমিও ছোটকালে এমন ছিলাম মনে করে বৌদ্ধ বান্ধব বিনয়াচরণ করা। সর্বস্তরে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে অবস্থান করা।


প্রত্যহ পুণ্যকর্ম অভ্যাস করাঃ

(১) বুদ্ধকে জ্ঞানযুক্ত চিত্তে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করা।

(২) ধর্মকে জ্ঞানযুক্ত চিত্তে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করা।

(৩) সংঘকে জ্ঞানযুক্ত চিত্তে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করা।

(৪) পঞ্চসীলকে জ্ঞানযুক্ত চিত্তে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করা।

এ চরিত্র বারিত্র আচরিত অভ্যস্ত পুণ্যকর্মের প্রভাব থাকলে; অপায়গতি আমার জন্য নয় বলে নিশ্চিন্ত থাকা। অপায়গতি আমার সাথে কোন সম্পর্ক নাই বলে সুখে থাকা। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।