দান আসলে কি রকম হয়।

দান মাঠে যুদ্ধ করার মত আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

দান মাঠে যুদ্ধ করার মত।

দান পারমীর হেতু না থাকার ব্যক্তির চেতনা কৃপণ হয়, এ ব্যক্তির চাহিদা শেষ নেই। তাই সে যৎ সামান্যও দান করতে পারে না।


এ অতৃপ্ত লোকজগত চাহিদার শেষ নেই যত পায় তার চেয়ে আরো বেশি বেশি চায়। তাই প্রাণীমাত্রই তৃষ্ণার দাস।

তাই বুদ্ধ ভাষণ করেছিলেন- "ঊনো লোকো অতিত্তো তণ্হাদাসো"- লোকো- এ জগতটা। ঊনো- শুধু প্রয়োজনের জন্য থাকে। অতিত্তো- কোন সময়েও সন্তুষ্ট তৃপ্ত হয় না। তণ্হাদাসো- তৃষ্ণার দাস হয়ে থাকে। ইতি- এরুপে। ভগবা- বুদ্ধ ভগবা। অবোচ- উত্তমরুপে ভাষণ করেছিলেন।

অতৃপ্ত তৃষ্ণার চাহিদটা একটি থাকলে আরেকটি চায়। তাই এ স্বভাব বৈশিষ্ট্য ব্যক্তি সে নিজের কোন কিছুকে ত্যাগ করতে কৃপণতা করে।
বুদ্ধের অমৃত বচনে- দান একটি মাঠের যুদ্ধের মত। যে ব্যক্তি মরণকে ভয় করে সে যেমনি যুদ্ধ করতে পারে না, তেমনি যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ শেষ হয়ে যাবে এমন ভয় করে সে কখনো দান করার সাহস বা চেতনা থাকে না। কারণ সে কৃপণ।

মরণকে ভয় না করা ব্যক্তি যেমনি যুদ্ধ করার সাহস থাকে, তেমনি ধন-সম্পদ শেষ হয়ে যাবে এমন ভয় না করার ব্যক্তিই সশ্রদ্ধে দান করতে পারে, তথা দানবীর হতে পারে। যেমনটা অনাথপিণ্ডিকের মত।

যুদ্ধ করতে যেমন- কৌশল, সাহস, অস্ত্র, অবস্থান অবস্থাকে বুঝে যুদ্ধ করতে হয়, তেমনি প্রক্রিয়াগত দান করতে হয়।

দান পুণ্যকর্ম করতে অলোভ-অদ্বেষ-অমোহ জ্ঞান সম্প্রযুক্ত চিত্ত চেতনা ও শ্রদ্ধাবল বিশেষ প্রয়োজন। কারণ পরশ্রীকাতরতা-কৃপণতা-আত্মমান-মিথ্যাদৃষ্টি ইত্যাদি ক্লেশকলুষগুলোকে জিত্তে হবে।

ক্লেশকলুষ শত্রুগুলোকে জিতে নিতে ত্যাগ (অকৃপণ) শ্রদ্ধা (কর্মবিশ্বাস)। অদ্বেষ (অব্যাপদ, অবিহিংসা মৈত্রী বা শীলাচরণ) অমোহ (আর্যসত্যকে বুঝার প্রজ্ঞা ও নৈষ্ক্রম্য সঙ্কল্প) থাকা অত্যন্ত দরকার।

শত্রুদেরকে কোন একজন বলবান ব্যক্তি পরাজিত করার মত শতশত অকুশল ক্লেশ শত্রুকে জয় করার জন্য অলোভ-অদেষ-অমোহ জ্ঞান সম্প্রযুক্ত শ্রদ্ধাচিত্ত নিতান্ত দরকার।

দান চেতনার দ্বারা কৃপণতাকে জয় করা, অদ্বেষ শীলাচরণের দ্বারা ক্রোধকে জয় করা। অমোহ প্রজ্ঞা ভাবনা জ্ঞানের দ্বারা মোহকে সমূলে উৎপাটন করা।

তাই দান করার আগে অন্ততঃ কর্মস্বকীয়তা সম্যকদৃষ্টি জ্ঞান রেখে ত্রিশরণ ও পঞ্চশীল, অষ্টশীলের প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংঘগুণের উদ্দেশ্যে দান করা অবশ্য।

তার চেয়ে উত্তম দান করতে চাইলে ধ্যান সম্যকদৃষ্টি, বিদর্শন সম্যকদৃষ্টি, মার্গফল সম্পর্কিত সম্যকদৃষ্টি জ্ঞান রেখে দান করতে পারলে স্তরে উচ্চতর স্তরে দানের মহৎফল হয়।

"ইদম্মে ধম্মদানং আসবক্খযং বহং হোতু"- এ অমৃত ধর্মদান আস্রবক্ষয়ের হেতু হোক।


লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।