ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রের মানে কি।।

ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের।


শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথির সাথে বুদ্ধের নব আবিষ্কৃত সত্য ও দুঃখ মুক্তির নৈর্বাণিক ধর্ম প্রচারের শুভ সূচনা হয়। এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের নিকট ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র দেশনা করেন। শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে এই ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র নিয়ে ত্রিপিটকের আলোকে সহজ ও পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

আজ শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা ২৫৬৫-বুদ্ধাব্দ, ২৩শে জুলাই ২০২১ইং, শুক্রবার। ধর্মদেশনার প্রারম্ভে- বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের অনন্তগুণকে বন্দনা করে বুদ্ধের সর্বপ্রথম দেশিত নবলোকোত্তর ধর্মচক্রপ্রবর্তন সুত্র অনুবাদ দেশনা উপকার করছি।

ধর্মচক্র সুত্রঃ
(ক) ভিক্খূনং পঞ্চবগ্গীনং, ইসিপতন নামকে। মিগদাযে ধম্মবরং, যং তং নিব্বান পাপকং।
(খ) সহম্পতি নামকেন, মহাব্রহ্মেন যাচিতো। চতুসচ্চং পকাসন্তো, লোকনাথো আদেসযি।
(গ) নন্দিতং সব্বদেবেহি, সব্ব সম্পত্তি সাধকং। সব্বলোকহি তত্থায, ধম্মচক্কং ভণামহে।

ধর্মচক্র নিদানঃ
ভগবা বুদ্ধ এক সময় বারাণসী রাজ্যে ঋষিপতন নামক মৃগদের অভয় অরণ্য মৃগদাবনে অবস্থান করেছিলেন। সেই সময় ভগবা বুদ্ধ পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদেরকে আহ্বান করছিলেন-
বুদ্ধ ভগবা এক সময় বারাণসী ঋষিপতন মৃগদের অভয় অরণ্য মৃগদাবনে অবস্থান কালে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদেরকে আহ্বান করছিলেন-

দুই অন্তঃ (অনর্থকর পথ)
১। হীন গ্রাম্যদের আচরণ, কেবল পৃথকজনের আচরণ, আর্যদের আচরণীয় ধর্ম নয়। যা হিত সুখকর নয়। কামে কাম সুখে আসক্ত হয়ে পুনঃপুন চেষ্টার এক অনর্থকর অন্ত।
২। কায়িক মানসিক কষ্টকর, আর্যদের আচরণ নয়। হিত সুখকর নয়। নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়ে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনকে পুনঃপুন চেষ্টার এক অনর্থক অন্ত। ইহাই দুই অনর্থকর অন্ত।

মধ্যম প্রতিপদঃ
ভিক্ষুগণ ! সেই দুই অন্ত জরিত না হয়ে তথাগতের স্বয়ং প্রত্যক্ষ প্রজ্ঞাচক্ষু উৎপন্নকারী। জ্ঞান উৎপন্নকারী। মধ্যম প্রতিপদ আচরণ- ক্লেশাগ্নি উপশম করা, অভিজ্ঞানের দ্বারা চার আর্যসত্যকে স্বয়ং প্রত্যক্ষ করা; নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার সক্ষম আর্যমার্গ জ্ঞান লাভ এবং নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার জন্যে হয়।
ভিক্ষুগণ! প্রজ্ঞাচক্ষু উৎপন্নকারী, জ্ঞান উৎপন্নকারী, ক্লেশাগ্নি উপশম করা, অভিজ্ঞানের দ্বারা চার আর্যসত্য অভিজ্ঞান লাভ, নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার আর্যমার্গ জ্ঞান লাভ এবং নির্বানকে প্রত্যক্ষ করা জন্যে সেই মধ্যম প্রতিপদ আচরণ কি?

সম্যকদৃষ্টি, সম্যকসঙ্কল্প, সম্যকবাক্য, সম্যককর্ম,
সম্যক আজীব, সম্যকব্যায়াম, সম্যকস্মৃতি, সম্যকসমাধি।

মার্গাঙ্গ আলোকঃ (কথিকের ভাষা)
চতুরার্য্য সত্যকে সম্যকভাবে স্বয়ং প্রত্যক্ষ করা- সম্যকদৃষ্টি। চতুরার্য্য সত্য ধর্মালম্বন নির্বানমুখি চিন্তা করা- সম্যকসঙ্কল্প। চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে সম্যক কথা বলা- সম্যকবাক্য।
চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে সম্যক কর্ম করা- সম্যককর্ম।
চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে সম্যক জীবন-জীবিকা করা- সম্যক আজীব।
চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে সম্যকভাবে বারংবার চেষ্টা করা- সম্যকব্যায়াম।
চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে সম্যকভাবে অপ্রমাদে থাকা- সম্যকস্মৃতি।
চতুরার্য্য সত্য জ্ঞান লাভে উপচার ও অর্পনা সমাধি- সম্যকসমাধি।

দুঃখসত্যঃ
ভিক্ষুগণ ! ইহা দুঃখ আর্যসত্য। প্রতিসন্ধি গ্রহণও দুঃখ।
জরাও দুঃখ। ব্যাধিও দুঃখ। মরণও দুঃখ। অপ্রিয় সংযোগও দুঃখ। প্রিয় বিয়োগও দুঃখ।
ইচ্ছিত বস্তু অলাভও দুঃখ। সংক্ষেপে- তৃষ্ণা, মিথ্যাদৃষ্টি আসক্তিযুক্ত পঞ্চোপাদান স্কন্ধ দুঃখ।
সমুদয়সত্যঃ
ভিক্ষুগণ! ইহা দুখের কারণ আর্যসত্য। যে তৃষ্ণা নতুন ভবের জনক, তৃষ্ণার সহকারে হয়। এই সেই বিষয়ালম্বনের অভিনন্দন করে। সেই তৃষ্ণা কি?
কামতৃষ্ণা- কাম ভবের তৃষ্ণা।
ভব তৃষ্ণা- আত্মা নিত্য ধারনা শাশ্বতদৃষ্টিগত তৃষ্ণা।
বিভবতৃষ্ণা- আত্মা ছিন্ন ধারনা (পুনজন্ম /প্রতিসন্ধি অবিশ্বাস) উচ্ছেদদৃষ্টিগত বিভব তৃষ্ণা।

নিরোধসত্যঃ
ভিক্ষুগণ ! ইহা দুঃখ নিরোধ আর্যসত্য। সেই দুঃখ নিরোধসত্য হল তৃষ্ণা সমূলে উৎপাটন- বিরাগ-ত্যাগ-পরিত্যাগ-মুক্তি-অনালয়ই নির্বান।

মার্গসত্যঃ
ভিক্ষুগণ! ইহা দুঃখ নিরোধ প্রতিপদমার্গ আর্যসত্য। সেই আর্যমার্গ ৮টি অঙ্গ আছে-
সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সঙ্কল্প, সম্যক বাক্য- যথার্থ বাক্য, সম্যককর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যকসমাধি।
দুঃখসত্যে সত্য জ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! ইহা দুঃখ আর্যসত্য বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।
কথিকের বিশ্লেষণঃ
চক্ষু- প্রজ্ঞা চক্ষু। জ্ঞান- সত্যের জ্ঞাত জ্ঞান। প্রজ্ঞা- পুঙ্খানুপুঙ্খ দর্শন প্রজ্ঞা। বিদ্যা- স্বয়ং প্রত্যক্ষ বিদ্যা। আলোক- জ্ঞানের আলোক।

দুঃখ সত্যের কৃত্যজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ! সেই দুঃখ আর্যসত্যকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা উচিত বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।
দুঃখসত্যের কৃতজজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ! সেই দুঃখ আর্যসত্যকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জ্ঞাত হয়েছি বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।
সমুদয় সত্যের সত্য জ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ! এ তৃষ্ণা দুঃখের কারণ আর্যসত্য বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব সমুদয়সত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।
সমুদয় সত্যের কৃত্য জ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ! সেই দুঃখের কারণ আর্যসত্যকে প্রহান করা উচিত বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব সমুদয়সত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

দুঃখ সমুদয় সত্যের কৃত জ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! সেই দুঃখের কারণ আর্যসত্যকে প্রহান করেছি বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব সমুদয়সত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

নিরোধ সত্যের সত্যজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! এ নির্বান দুঃখনিরোধ আর্যসত্য বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখ নিরোধসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

নিরোধ সত্যের কৃত্যজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! দুঃখনিরোধ আর্যসত্যকে প্রত্যক্ষ করা উচিত বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখ নিরোধসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

নিরোধ সত্যের কৃতজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! সেই দুঃখ নিরোধ আর্যসত্যকে প্রত্যক্ষ হয়েছে বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখ নিরোধসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

মার্গ সত্যের সত্যজ্ঞানঃ
ভিক্ষুগণ ! এ অষ্টাঙ্গিকমার্গ দুঃখনিরোধ নির্বানে পৌঁছার প্রতিপদ আর্যসত্য বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব মার্গসত্য আমার চিত্তে- চক্ষু উদয় হয়েছে। জ্ঞান উদয় হয়েছে। প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যা উদয় হয়েছে। আলোক উদয় হয়েছে।

মার্গ সত্যের কৃত্যজ্ঞানঃ
প্রিয় ভিক্ষুগণ ! দুঃখনিরোধ নির্বানে পৌঁছার উপায় উত্তম প্রদিপদ আর্যসত্যকে ভাবনা করা উচিত বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখনিরোধ মার্গসত্য আমার চিত্তে- প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞান চক্ষু উদয় হয়েছে। অনুশীলন জ্ঞানচক্ষু উদয় হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ দর্শন বলিষ্ঠ প্রজ্ঞা উদয় হয়েছে। স্বয়ং প্রত্যক্ষ করার সক্ষম বিদ্যা উদয় হয়েছে। মোহ বিনাশক আলোক উদয় হয়েছে।

কথিকের বিশ্লষণঃ
চক্খু- প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞান চক্ষু। ঞাণং-অনুশীলন জ্ঞান। পঞ্ঞা-পুঙ্খানুপুঙ্খ দর্শন বলিষ্ঠ প্রজ্ঞা। বিজ্জা- স্বয়ং প্রত্যক্ষ করার সক্ষম বিদ্যা। আলোক-মোহ বিনাশক আলোক।

মার্গ সত্যের কৃত্যজ্ঞানঃ
প্রিয় ভিক্ষুগণ ! দুঃখনিরোধ নির্বানে পৌঁছার উপায় উত্তম প্রতিপদ আর্যসত্যকে ভাবনা অনুৃশীলনের দ্বারা সমাপ্ত হয়েছে বলে আমি বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের পূর্বে শুনেনি এ অশ্রুতপূর্ব দুঃখনিরোধ মার্গসত্য- আমার চিত্তে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞান চক্ষু উদয় হয়েছে। অনুশীলন জ্ঞানচক্ষু উদয় হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ দর্শন বলিষ্ঠ প্রজ্ঞা উদয় হয়েছে। স্বয়ং প্রত্যক্ষ করার সক্ষম বিদ্যা উদয় হয়েছে। মোহ বিনাশক আলোক উদয় হয়েছে।

বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ অস্বীকারঃ
প্রিয় ভিক্ষুগণ! আমার যাবৎ উক্ত আর্যসত্যের সত্যজ্ঞান-কৃত্যজ্ঞান-কৃতজ্ঞান দ্বাদশ আকার (৩ x ৪ = ১২) যথাভূত জ্ঞানদর্শন উদয় হয়নি, ভিক্ষুগণ! তাবৎ আমি দেবলোক সহ, বসবর্তী মারভুবন সহ, ব্রহ্মালোক সহ অনন্তচক্রবালে কোন শ্রমন, ব্রাহ্মণ, মনুষ্য, দেব, ব্রহ্মা সত্বগণের নিকট সর্বজ্ঞ অভিসম্বুদ্ধ জ্ঞান লাভ করেছি বলে প্রকাশ করিনি।

বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ স্বীকারঃ
প্রিয় ভিক্ষুগণ! যে সময়ে আমি চার আর্যসত্যের সত্যজ্ঞান-কৃত্যজ্ঞান-কৃতজ্ঞান দ্বাদশ আকার (৩ x ৪ = ১২) যথাভূত জ্ঞানদর্শন উদয় হয়েছে। প্রিয় ভিক্ষুগণ ! সেই সময় আমি দেবলোক সহ, বসবর্তী মারভুবন সহ, ব্রহ্মালোক সহ অনন্তচক্রবালে কোন শ্রমন, ব্রাহ্মণ, মনুষ্য, দেব, ব্রহ্মা সত্বগণের নিকট অতুলনীয় সর্বজ্ঞ অভিসম্বুদ্ধ জ্ঞান লাভ করেছি বলে প্রকাশ করেছি।

প্রত্যবেক্ষণ জ্ঞানঃ
প্রিয় ভিক্ষুগণ ! আমার যথাভূত প্রত্যবেক্ষণ জ্ঞান উদয় হয়েছে। আমি অরহত্ব ফলজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এ জন্ম আমার অন্তিম জন্ম, আমার আর পুনজন্ম না হবে না। সেই জ্ঞানদর্শন উদয় হয়েছে।

পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষু ধর্মের প্রসন্নঃ
অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধ এ ধম্মচক্ক পবত্তন সুত্রকে সর্বপ্রথম দেশনা করেছিলেন। কোণ্ডণ্য প্রমুখ পঞ্চবর্গীয় শিষ্যগণ বুদ্ধের দেশিত ধর্মদেশনা শ্রবন করে আর্য সত্যজ্ঞান উদয় হলে প্রীত আনন্দিত হয়েছিলেন।

কোণ্ডণ্য স্রোতাপন্নঃ
এ ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনা করলে- দীর্ঘায়ু কোণ্ডণ্য স্থবির দৃষ্টিমুক্ত স্রোতাপত্তি মার্গ ধর্মচক্ষু উদয় হয়। ত্রি-ভূবনে বর্তদুঃখ সমূহ কারণে উৎপন্ন হয়, কারণে উৎপন্ন বর্তদুঃখ সমূহ নিরোধও হয়। কারণে উৎপন্ন ধর্ম সমূহ দীর্ঘক্ষণ থাকে না। এ যথাভূত জ্ঞানচক্ষু উদয় হয়।

কথিকের বিশ্লষণঃ
"যং কিঞ্চি সমুদযধম্মং, সব্বতং নিরোধ ধম্ম'ন্তি"- কারণে উৎপন্ন সবকিছু নিরোধের স্বভাব আছে (কারণে উৎপন্ন ধর্ম সমূহ দীর্ঘক্ষণ থাকে না)। উৎপন্ন ধর্ম সমূহ ভঙ্গুরতায় শেষ হয় সবকিছু আরম্ভ থাকলে শেষও হয়। নিদান থাকলে নিট্ঠতংও থাকে। প্রিয়তা অপ্রিয়তে শেষ হয়। জীবন মরণে সমাপ্ত হয়। যৌবন জরাজীর্ণের শেষ হয়। ধন-সম্পদ হারানোতে শেষ হয়। জন্ম মরণের অবসান হয়। প্রিয়সংযোগ অপ্রিয়বিয়োগে শেষ হয়। প্রশংসাা নিন্দা অপবাদের ইতিটানে। জাগতিক সমস্ত সুখ শান্তি দুঃখেতে পরিসমাপ্ত হয়।

দেব ব্রহ্মাগণের সাধুবাদ প্রদানঃ
অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনার শেষান্তে- ভুমিবাসী দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেন। ও দেবগণ ! অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধ বারাণসী ঋষিপত্তন মৃগদাবনে অনুত্তর ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনা প্রদান সমাপ্ত করেছে। এ ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনাকে শ্রমন, ব্রাহ্মণ, দেব, মার, ব্রহ্মা এ অনন্তচক্রবাল লোকধাতুতে কোন কেউই বাঁধাবিগ্ন করতে পারেনি। সকলে সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন।

সেই ভুমিবাসী দেবগণের সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- চতুর্মহারাজিক দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

চতুর্মহারাজিক দেবগণের সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- তাবতিংস দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

তাবতিংস দেবগণের সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- যাম দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

যাম দেবগণের সাধুবাদের ধ্বনি শুনে- তুষিত দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

তুষিত দেবগণে সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- নিম্মানরতী দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

নিম্মানরতী দেবগণের সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- পরনিম্মিতবসবর্তী দেবগণ সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

পরনিম্মিতবসবর্তী দেবগণের সাধুবাদ ধ্বনি শুনে- ব্রহ্মাকায় পর্যন্ত সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলেন-

ও দেব ব্রহ্মাগণ! অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধ বারাণসী ঋষিপত্তন মৃগদাবনে অনুত্তর ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনা প্রদান সমাপ্ত করেছে। এ ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র দেশনাকে শ্রমন, ব্রাহ্মণ, দেব, মার, ব্রহ্মা এ অনন্তচক্রবাল লোকধাতুতে কোন কেউই বাঁধাবিগ্ন করতে পারেনি। সকলে সমস্বরে সাধুবাদ ধ্বনি প্রদান করেছিলে।

সেই সময়ে, সেই লয়ে, সেই মুহুর্তে অকনিষ্ঠ ব্রহ্মালোক পর্যন্ত স্তরে স্তরে সাধুবাদ ধ্বনিত হয়েছিল।

১০ সহস্র লোকধাতু কম্পনঃ
১০ সহস্র লোকধাতু চক্রবালও নমিত হয়ে মৃদুমৃদু কম্পন হয়েছিল। উপরদিকে ঝেঁকে ঝঁকে কম্পন হয়েছিল এবং দোলে-দোলে কম্পন হয়েছিল।

আলোক উৎপন্নঃ
দেব ব্রহ্মাগণের সমস্ত ঋদ্ধিকে অতিক্রমণ করে ১০ সহস্র লোকধাতু চক্রবালে অপরিমেয় মহত্তম বিস্ময়কর আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল।

বুদ্ধের উদান কথাঃ
সেই সময় অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধ আনন্দিত মনে এ উদান কথা বলেছিলেন। ও দেব ব্রহ্মাগণ! আমার সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র কোণ্ডণ্য ধর্মচক্ষু উদয় হয়ে স্রোতাপন্ন হয়েছে। এ উদান কথার মাধ্যমে দীর্ঘায়ু ভদন্ত কোণ্ডণ্য স্থবিরকে অঞ্ঞসি কোণ্ডণ্য নামে পরিচিত হয়েছিল।

কোণ্ডণ্য উপসম্পদা প্রার্থনাঃ
স্রোতাপন্ন সেই দীর্ঘায়ু কোণ্ডণ্য-
স্বয়ং দৃষ্টধর্ম-
স্বয়ং লব্ধধর্ম-
স্বয়ং বেদিতধর্ম-
স্বয়ং জ্ঞাতধর্ম- (জ্ঞাত জ্ঞানই শরণের ধর্ম)
সংশয় উত্তীর্ণধর্ম-
সংশয়মুক্ত ধর্ম-
ভয়মুক্ত বীরত্বের উপনীতধর্ম-
বুদ্ধের শাসনে স্বয়ং জ্ঞাত জ্ঞানের দ্বারা অন্যের শরণমুক্ত। অনন্তগুণ সম্পন্ন বুদ্ধকে এরুপ প্রার্থনা করেছিলেন। ভন্তে! আমি শাস্তা শাসনে উপসম্পদা লাভে প্রার্থনা করছি।

এহি ভিক্ষু উপসম্পদাঃ
বুদ্ধ এরুপ আহ্বান করলেন- ও ভিক্ষু এসো, আমি ধর্মকে সম্যকভাবে ব্যাখ্যা করেছি। সংসার বর্তদুঃখকে অন্তসাধন করার মার্গ ব্রহ্মচর্য আচরণ কর। দীর্ঘায়ু কোণ্ডণ্য এহি ভিক্ষু উপসম্পদা প্রাপ্ত হলেন।
ধম্মচক্কপবত্তন সুত্ত নিট্ঠতং- ধর্মচক্রপ্রবর্তন সুত্র সমাপ্ত।

উৎসর্গঃ
অনন্ত সত্ত্বজগতে সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক। ইদম্মে অমত ধম্মাদানং নিব্বানস্স পচ্চযো হোতু। এ অমৃতদান নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার চক্ষু, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আলোক উৎপন্নের হেতু হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের
বেতবুনিয়া কেন্দ্রিয় বিহার, কাউখালী
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।



Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।