পৃথকজন ও আর্যের ফারাক কি।
পৃথকজন ও আর্যের ফারাক দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
পৃথকজন নিজের দেহ-মনকে ভরসা করে। আর্যগণ নিজের দেহ ওমনের ভেতরে ভরসা করার মত কিছু সার না দেখে দেহ ও মনকে বিরাগ বিমুখ হন।
পৃথকজনের চিত্তে অতৃপ্ত লোভ, অসহ্য দ্বেষ-ক্রোধ-হিংসা, অজ্ঞতা মোহের নিপীড়ন শিকার হয়ে থাকে।
বাঁশ, কলা গাছকে যেমনি নিজের ফল হত্যা করে তেমনি লোভ, দ্বেষ, মোহও নিজের ভরসা করা দেহ ও মনকে অপায়ে পাঠিয়ে দেয়। জরা, ব্যাধি, মরণ মরুসংসার থেকে মুক্ত হতে না পেরে অসহ্য দুঃখপীড়ন খেয়ে থাকতে হয়।
লৌহকে যেমন জং ক্ষতি করে। পচন ধরা ক্ষতস্থান দেহ-মন থেকে যেমন কীট পরে তেমনি নিজের চিত্তকে ভরসা করতে না পারা পৃথকজনের দেহ-মনেও ক্লেশ কীট পরে। কেন ? লোভ-দ্বেষ-মোহের কারণেই অপায়গতি হতে হয়। সংসারকে দীর্ঘ করার স্বভাব থাকে এ পৃথকজনের।
"লোভো দোসো চ মোহো চ, পুরুসং পাপ চেতসং।
হি বংসন্ত অত্ত সম্ভূতা, তচসারংব সফলং"
তচ সারং- বাঁশ। সফলং- নিজের ফল। হি বংসতি ইব- পীড়ন দিয়ে হত্যা করার মত। পাপ চেতসং- হীন মনসিকার থাকা। পুরিসং- পৃথকজন সত্ত্বকে। লোভো চ, দোস চ, মোহ চ- লোভ দ্বেষ মোহ গুলো। অত্তসম্ভূতা- জন্ম জন্মান্তর সংসারে পীড়ন করে আসা। ইমে তযো পচ্চত্থিকা- এ তিনজন শত্রুরা। হি বংসন্তি- নিজের দেহ-মনকে ক্ষতি করে থাকে। তাই এ মিথ্যাদৃষ্টি বিচিকিচ্ছাকে সহসা ছিন্ন করে জন্ম নিরোধ নির্বানে পৌঁছতে সক্ষম এমন মার্গধর্মকে উপলব্ধি করা উচিত।
আর্যগণ নিজের চিত্তকে নিজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। আর্য অপায়গামী সংসার বিচরণীয় কর্ম করেন না। সেই আর্য স্তরে সহসা উন্নীত হতে চাইলে- "জাতি দুক্খা, অ-জাতি সুখং" পালি শ্লোকটিকে স্মৃতি প্রজ্ঞা দিয়ে উপলব্ধি করা।
জাতি- প্রতিসন্ধি গ্রহণ করাটা। দুক্খা- দুঃখসত্য। অ-জাতি- পুনঃ প্রতিসন্ধি গ্রহণ না করা পরিনির্বাপিত হওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণভাবে নিরোধ হওয়াটা। পরমং সুখং- পরম সুখ।
স্রোতাপত্তি মার্গফল লাভী আর্য ৮-বার জন্মগ্রহণ করে না। সর্বশেষ সপ্তমবারে অরহত হয়ে পরিনির্বাপিত হন। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।তারিখ-১৬ জুলাই ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment