অবিদ্যা তৃষ্ণার প্রতারণা ফাঁদ দেশনা।
অবিদ্যা তৃষ্ণার প্রতারণা ফাঁদ আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।
অবিদ্যা, তৃষ্ণা ৩১ ভূমির সকল সংসার যাত্রীকে দুঃখ সাগরে ডুবিয়ে রাখতে পছন্দ করে। অবিদ্যা দুঃখ সত্যকে কখনো জানতে দেয় না ঢেকে রাখে। তৃষ্ণা বিষয় বাসনা মলম সুখ দিয়ে ভুলিয়ে রাখে।
অবিদ্যার অধীন, তৃষ্ণার বিষয় বাসনা শিকার হয়ে অসহায় সংসার যাত্রী অথৈ দুঃখ সাগরে একবার ডুবে একবার ভাসিয়ে থাকে। দুঃখ সত্যকে দুঃখ সত্য বলে না জানার সম্যক দৃষ্টি জ্ঞান না থাকার কারণে মনুষ্য সুখের চেয়ে স্বর্গের দিব্য সুখকে অত্যধিক সুখময় মনে করে। স্বর্গ সুখের চেয়ে ব্রহ্মা সুখকে অত্যধিক সুখময় মনে করার এ মিথ্যা ধারনাটা নিজেকে নিজে ঠকিয়ে থাকে।
অবিদ্যা তৃষ্ণার ফাঁদে পরে কতক অচিন্তনীয় সত্ত্ব অপায় দুঃখে পতিত হয়েছে এ হিসেবের নোট কারো নেই। এদের ফাঁদে পরে মনুষ্য, দেব, ব্রহ্মা ভবের জন্মকে কতই না অত্যধিক সুখময় বলে ধারনা করে।
মানবকুলে প্রবেশ করতে মাতৃ গর্ভাশয় হয়ে আসতে হয়। দেব ব্রহ্মাগণ আপন পুণ্য ধ্যান বলে স্বর্গ ও ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয় এবং যথা আয়ুষ্কাল পর্যন্ত থাকার পর আবার চ্যুত হয়। মনুষ্য জন্ম ০৯-১০ মাস মাতৃগর্ভে থাকার পর ভুমিষ্ঠ হয়ে বাহিরের পরিবেশ সংস্পর্শ ও মাতা-পিতার উপকারে সময় মতে লিখাপড়া করা, পরে পেটের তাগিদে যে কোন একটি কর্ম করে টাকাপয়সা উপার্জন করে সাংসারিক কাজগুলোকে সামাল দেয়।
জন্ম থেকে বহন করে নিয়ে আসার দেহ-মনের জন্য থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দিতে দিতে বয়োবৃদ্ধ জরা ব্যাধি ধরে অবশেষে জীবনটা মরণে ধসে পরে সমাপ্ত হয়।
এ দেহ মনের জন্য কতকিছু কর্ম করতে হয়। এ দেহ মন রোগের ঘর। নানা রোগ হলে নানা চিকিৎসা করে দিতে হয়। এ দেহ মন কতই না নিজেকে কষ্ট দিয়ে থাকে। তবুও কেউ জিজ্ঞেস করলে অনেকেই আমি খুবি সুখে আছি সহজে বলে দেয়।
অতীতের অবিদ্যা এ জন্ম-জরা-ব্যাধি-মরণ দুঃখকে দুঃখসত্য বলে বলেছিল কি? না বলেনি, বরং দুঃখসত্যকে গোপন করে; তৃষ্ণার সাথে বন্ধুত্ব করে তুমি তাদেরকে মনুষ্য সুখ, দেব সুখ, ব্রহ্মাসুখ দেখিয়ে দাও, যাতে ওরা এ দেহ-মন দুঃখসত্যকে জানতে দেখতে না পায়।
এ তৃষ্ণা অবিদ্যার কথা মতে-মনুষ্য, দেব, ব্রহ্মার সাইনবোর্ড দেখিয়ে দিয়ে সংসার দুঃখ সাগরে ডুবিয়ে ঠকে রেখেছে।
ওহ্! এ অজ্ঞ মূর্খ অবিদ্যা তৃষ্ণা পরিচালিত সংসারে কতক অসংখ্য প্রাণী ডুবে গেলেও এরা জ্ঞানীদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না।
এটি অবিদ্যার তৃষ্ণার প্রতারণার কাজ। এদের প্রতারণা থেকে মুক্ত হতে চাইলে বুদ্ধের ধর্মোপদেশ এর প্রতিষ্ঠিত গৃহী-শ্রামণ-ভিক্ষু- যে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হোক না তাঁদের সান্নিধ্য হয়ে আর্যাষ্টাঙ্গিক মার্গ আচরণ অনুশীলন উপলব্ধি করে লৌকিক থেকে লোকুত্তরে পৌঁছা যাওয়া।
লোকুত্তর নির্বাণে না পৌঁছার পর্যন্ত লৌকিক জগত থেকে মুক্ত নয়। লৌকিক থেকে মুক্ত হতে না পারলে সংসারের বিচরণ শেষ হবে না। তাই সাড়ে তিন হাত এ দেহ-মন কায় থেকে নির্বানকে খুঁজে নেওয়ার কাজ করা। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।
লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।তারিখ-১৪ জুলাই ২০২১ খ্রিঃ।
Comments
Post a Comment