বুদ্ধানুস্মৃতি ভাবনায় অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী স্রোতাপন্ন হয়েছিলেন।

বুদ্ধানুস্মৃতি ভাবনার বলে অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী স্রোতাপন্ন হয়েছিলেন আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

বুদ্ধানুস্মৃতি ভাবনার বলে অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী স্রোতাপন্ন হয়েছিলেন দেশনা।



শ্রাবস্তী অনাথপিণ্ডিকের সাথে রাজগীর শ্রেষ্ঠী একে অপরে বোনের জামাই জ্ঞাতি সম্পর্কে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। বুদ্ধ সর্বপ্রথম রাজগীরে অবস্থান কালে অনাথ পিণ্ডিক পাঁচশত শকট ভর্তি পণ্য নিয়ে ব্যবসা কাজে আসলে; শ্রেষ্ঠী দু'জনের মধ্যে নিজেদের নগরে প্রবেশ কালে প্রবেশদ্বারে এসে রীতিমত আগমনের শুভেচ্ছা জানাতেন।

কিন্তু ঐদিনে রাজগীর শ্রেষ্ঠী বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদানের প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত থাকায় অনাথ পিণ্ডিককে শুভেচ্ছা জানাতে সময় হয়নি।

বুদ্ধ নামক শব্দ এ প্রথম শ্রবণ-
রাজগীর শ্রেষ্ঠী কাজকর্ম সেরে অনাথ পিণ্ডিকের নিকট দেখা করতে আসলে শ্রেষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করলেন এত ব্যস্ততা কি কাজ করতেছেন?

তখন রাজগীর শ্রেষ্ঠী অনাথ পিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীকে বললেন। আগামীকাল সকালে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদানের পুণ্যময় কাজ করতেছিলাম বললে- অনাথ পিণ্ডিক এ প্রথম "বুদ্ধ নামক শব্দ" শুনতে পেয়ে তাঁর সারা শরীর প্রীতিতে ভরে যেন ভুলে গেছে এমন ছলে পুনঃ জিজ্ঞেস করলেন শ্রেষ্ঠী আপনি 'বুদ্ধ' বলেছিলেন কি? হ্যাঁ বুদ্ধ বলেছিলাম এতে শ্রেষ্ঠীর মনে আরো বেশি প্রীতি উৎপন্ন হয়ে পুনঃপুন ০৩ বার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে শ্রেষ্ঠী আপনি 'বুদ্ধ' বলেছিলেন কি? হ্যাঁ বুদ্ধ বলেছিলাম।

ধাতু সংস্পর্শ সম্পর্কঃ-
এ জগতে ধাতু সংস্পর্শ সম্পর্ক অতি বিস্ময়কর ধর্মতা স্বভাব থাকে যা অকস্মাৎ দেখলে শুনলে ধাতু সংস্পর্শ সম্পর্ক ধর্মতার ফলে লোমহর্ষ বিস্ময়কর প্রীতি পুলক হয়। অনাথ পিণ্ডিকের মনেও বুদ্ধ শাসনে বিহার দাতা হবেন এমন ০১ লক্ষ কল্পকালে উৎপন্ন পদুমুত্তর বুদ্ধের পাদমূলে বর গ্রহণ করেছিলেন। তাই "বুদ্ধ নামক শব্দ" উচ্চারণ শুনে অতি উত্তম রস্বাদযুক্ত অনুভব ধাতু সংস্পর্শ ধর্মতা সংঘটিত হওয়ার ফলে পুনঃপুন ০৩ বার জিজ্ঞেস করেছিলেন। শ্রেষ্ঠী! বুদ্ধ বলেছিলেন কি? হ্যাঁ তাই বলেছিলাম।

মনের প্রীতি জনিত তাঁর শরীরে ওভাস (আলো) উৎপন্ন হলো। "বুদ্ধ নামক শব্দ" শুনার সাথে সাথে বুদ্ধের নিকট যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাজগীর শ্রেষ্ঠী সন্ধ্যা হবার কারণে যাওয়ার উচিত হবে না বলে দিলে শয্যা ঘরে গেলেন। কিন্তু বুদ্ধ নামটি তার অন্তরে উদ্ভাসিত হওয়ার দরুন ঘুমাতে পারনি এছাড়া বুদ্ধের প্রতি প্রগাঢ় প্রীতির ফলে তার সারা শরীর থেকে আলো উৎপন্ন হলে অরুণোদয় হয়েছে মনে করে ০৩ বার পর্যন্ত উঠে বাহির পানে দেখছিলেন।

বুদ্ধের নিকট গমনঃ-

উঠে দেখার ০৩ বারের শেষ বার ঘর থেকে বেরিয়ে পরলে নিজের শরীর থেকে বের হওয়া আলোর উদ্ভাসকে সূর্যোদয় হয়েছে মনে করে রাস্তার অভিমুখে আসতে আসতে নগরের পশ্চিমদ্বার শ্মশানে এসে উপস্থিত হলে শ্মশানে মৃতদেহ গুলোকে দেখে মনে ভয় উৎপন্ন হবার সাথে সাথে শরীর থেকে আলো নিভে গেলে অন্ধকার হয়ে যায়।

ভয়ে অভিমুখে যাওয়ার সাহস না করে ফিরে যাবো কিনা চিন্তা করলে শ্মশান রক্ষীত ধার্মিক দেবতারা ফিরে না গিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য সাহস যোগালেন।

বুদ্ধের সমক্ষে উপস্থিতঃ

ধার্মিক দেবতাদের উৎসাহের মনের ভয় দূর হয়ে আগের মত মনে বুদ্ধের শরণ হলে শরীরের আলো পুনঃ উদ্ভাসিত হলো আবার মৃতদেহ পায়ের তলে পরলে পুনঃ আলো নিভে যায়, আবার দেবগণের সাহস যোগিয়ে দিলে ভয় দূর হয়ে পুন আলো দীপ্ত হয়। এমন ০৩ বার পরে বুদ্ধের কাছাকাছি গিয়ে উপস্থিত হন।

স্রোতাপন্ন অনাথপিণ্ডিকঃ

বুদ্ধের অনতিদূরে পৌঁছলে মনে মনে ভেবেছিলেন সবার জানা অনাথ পিণ্ডিক নামে না ডেকে কেউ না জানা অপরিচিত সুদত্ত নামে ডাকলে ভালো হতো এমন মনে করার মুহুর্তে বুদ্ধ "সুদত্ত এসো" ডাকলে অত্যধিক খুশি হয়ে "হ্যাঁ ওঁনিই সত্যিকারে বুদ্ধ" বলে প্রীত হয়ে বুদ্ধের পাদযুগল স্পর্শ করে বন্দনা করে নিলেন।
অতপর বুদ্ধ শ্রেষ্ঠীর উপযোগী ধর্মদেশনা প্রদান করলে অনাথ পিণ্ডিক তদস্থানেই স্রোতাপত্তি মার্গফল জ্ঞান লাভ করলেন। তারপর রাজগীর শ্রেষ্ঠীর গৃহে পিণ্ডগ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করার পর শ্রাবস্তীতে আগমনের জন্য নিমন্ত্রণ (ফাং) করলেন। পরে এ অনাথ পিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী বুদ্ধের সদ্ধর্ম শাসনে জেতবন বিহার দাতা শ্রেষ্ঠপদ স্বীকৃত নাম পিটকে উল্লেখ রয়েছে। বুদ্ধ এ জেতবন বিহারে ১৯ বর্ষা ধরে যথাসুখে অবস্থান করে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। আজ এ জেতবন বিহার দর্শনীয় তীর্থ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শ্রেষ্ঠী সারা জীবন ত্রিরত্নের সেবক হয়ে ইহলোকে দেহ ত্যাগের পর তাবতিংস স্বর্গে উৎপন্ন হন। শ্রেষ্ঠী হলেন উর্ধ্বগামী স্রোতাপন্ন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য- অনাথ পিণ্ডিকের মনে বুদ্ধ বুদ্ধ বলে যতবার স্মরণ হয়েছিল ততবার শ্রেষ্ঠীর মনে খুশি প্রীতি, শ্রদ্ধাবল, প্রজ্ঞাবল, বীর্যবল যেমনে উৎপন্ন হয়েছিল তেমনি শ্রোতাদের মনেও বুদ্ধের গুণকে শরণ করে করে শ্রদ্ধা, প্রজ্ঞা, বীর্যবল উৎপন্ন হোক এ পুণ্যের বলে ভয়ভীতি দূরীভূত হয়ে যথাসুখে সুখি হোক।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।