সংযোজন মানুষকে কেন পাগল করে।

সংযোজন মানুষকে পাগল করে আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

সংযোজন মানুষকে পাগল করে।


সংযোজন অর্থ বন্ধন, শৃঙ্খল, শিকড়, দড়িকে বুঝায়। এ সংযোজন মানুষকে পাগল করে ছাড়ে। এ সংযোজন প্রখর সূর্য তাপের মত, যত বেলা উঠে তত প্রখর হয়। ওরে সংযোজন! কেন সত্ত্বদেরকে এত পাগল করস?

মানুষ সংযোজনের বাহিরে নয়। মাতা-পিতা সন্তানের সংযোজন। সন্তান মাতা-পিতার সংযোজন। কেউ স্বামীর সাথে, কেউ স্ত্রীর সাথে, কেউবা প্রেমিক প্রেমিকার সাথে এভাবে জ্ঞাতি, মিত্র, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির সাথে সংযোজন প্রেম থাকে। সংযোজন অদৃষ্ট দড়ির মত।

এ অদৃষ্ট দড়িকে ছিন্ন করা অত সহজ নয়। এটি WireLess সংযোগের মত। এ সংযোজন কঠিন দড়িকে ধরা-ছোঁয়া-দেখা যায় না দৃঢ় সংযোগে থাকে।

সংযোজন WireLess সংযোগের মত। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে যোগাযোগ করুক না, বোতাম টিপানোর সাথে সাথে রিং পরে। প্রিয় মানুষটি পৃথিবী যে প্রান্তে থাকুক না WireLess মনশক্তি অতিদ্রুত তার নিকটে পৌঁছতে পারে। এমন কি কালগত জ্ঞাতি সত্ত্বার উদ্দেশ্যে পুণ্যদান করলেও WireLess সিস্টেমে পুণ্যরাশি পৌঁছে।

যতগুলো সংযোজনের মধ্যে প্রেমের সংযোজনের মত অন্য কোন সংযোজন নেই। এ সংযোজন অত্যন্ত দুঃখজনক। যার প্রেমমাত্রা যতবেশি সংযোজনের সন্তাপও ততবেশি হয়ে থাকে।

শ্রাবস্তী পূর্বারাম বিহার দাতা উপাসিকা বিশাখা তার অত্যন্ত আদরের একটি নাতিকে হারিয়ে পাগলের মত হয়েছিল কেউ শান্তনা দিয়ে তার শোক থামাতে পারেনি। পরে বুদ্ধের সমক্ষে এসে ধর্মোপদেশ শ্রবন করে স্মৃতি ফিরে আসলে স্বস্তি পেয়েছিল।

পটাচারী তো একেবারেই বিবস্ত্র উন্মাদ পাগল হয়েছিল। এও বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শ্রবন করে স্মৃতি উৎপন্ন হলে স্রোতাপন্না হয়েছিল। এগুলো সবি সংযোজনের কারণেই পাগল হয়েছে।

এ সংযোজন মানুষকে সু-ফল দেয় নাকি কু-ফল দেয়? সত্যিকার অর্থে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখলে এ সংযোজন কু-ফল ছাড়া সু-ফল দেয় না।

প্রত্যেক পৃথকজনের মনে এ সংযোজন থাকে। আর্যগণ এ সংযোজনকে ছিন্ন করে দেয়। পাগল হতে না চাইলে নিচে দেশনাটিকে শ্রবন করে নিও

স্মৃতিপ্রস্থান ধর্মানুদর্শন আয়তন পর্বঃ

হে ভিক্ষুগণ! এ বুদ্ধের শাসনে ভিক্ষু চক্ষুকেও জানে। রূপালম্বনকেও জানে। এ দু'টিকে ভিত্তি করে সংযোজন (বন্ধন) উৎপন্ন হয় বলে জানে।

অনুৎপন্ন সংযোজন উৎপন্নকেও জানে। উৎপন্ন সংযোজনকে তুলে ফেলার উপায়ও জানে।

তুলে ফেলার সংযোজন ভবিষ্যতে কখনো উৎপন্ন হবে না সেটিও জানে।

অনুরুপভাবে- কর্ণকেও জানে, শব্দালম্বনকেও জানে। নাসিকাকেও জানে, গন্ধালমন্বনকেও জানে। জিহ্বাকেও জানে, রস বা স্বাদকেও জানে। কায়কেও জানে, স্পর্শকেও জানে। মনকেও জানে, স্বভাব ধর্মতাকেও জানে।

এ সংযোজনকে কিভাবে ছিন্ন করত হয়?
এ সংযোজন কোথায় উৎপন্ন হয়?
প্রাত্যহিক Daily life জীবনে মানুষেরা কি কাজ করছে সেটিকে খেয়াল করে দেখলে-
মানুষ চোখ দিয়ে দেখার কাজ করে।
কান দিয়ে শুনার কাজ করে।
নাক দিয়ে গন্ধ নেওয়ার কাজ করে।
জিহ্বা আস্বাদের কাজ করে।
কায় স্পর্শের কাজ করে।
মন দিয়ে চিন্তা করার কাজ করে। প্রতিদিনে এ ০৬টি কাজ করে থাকে।

জন্ম থেকে মরণপর্যন্ত এ ০৬টি কাজকর্মে মানুষগুলো ব্যতিব্যস্ত থাকে। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, কায় ও মন এদের কাজ শেষ নেই, কোনদিন শেষও হবে না। মানুষ এদের কাজকর্মের বন্ধি।

এ সংযোজনকে ছিন্ন করতে হলে এদের কাজকর্ম গুলোকে করে দিয়ে দিয়ে ছিন্ন করতে হবে।

ভিক্ষু অনুৎপন্ন সংযোজন উৎপন্নের কারণকেও জানে। উৎপন্ন সংযোজনকে ছিন্ন করার উপায়কেও জানে।

কি কারণে সংযোজন উৎপন্ন হয়? "অযোনিসো মনসিকার"- অমনোযোগই সংযোজন উৎপন্নের কারণ। অনুচিত, অপ্রতিকূল, অযথার্থ মিথ্যাকে মনসিকার করলে "অযোনিসো মনসিকার"- মিথ্যা মনোযোগ হয়ে পরে। সহজ করে বললে স্মৃতিবিহীনকে অমনসিকার বা অমনোযোগ বলে।

তাই স্মৃতিবিহীন হলে মনে সংযোজন উৎপন্ন হয় বলে জানিও। উৎপন্ন সংযোজনকে ছিন্ন করার উপায় হল-, "যোনিসো মনসিকার" (সঠিক মনোযোগ)। উপযোগী মনোযোগ। স্মৃতি রত থাকাকে "যোনিসো মনসিকার" বলে। তাই স্মৃতি থাকলে সংযোজন ছিন্ন হয়। সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-
কামরাগ- বস্তুকাম, ক্লেশকামের তৃষ্ণা।
রূপরাগ- রূপ বিপাক ধ্যানের তৃষ্ণা।
অরূপরাগ- অরূপ বিপাক ধ্যানের তৃষ্ণা।
প্রতিঘাত- দ্বেষ বিদ্বেষ (হিংসা)।
মান- অহং, অহম।
দৃষ্টি- মিথ্যাদৃষ্টি।
শীলব্রতপরামর্শ- ভুল আচরণ।
বিচিকিৎসা- দ্বিমত (দ্বিধাদ্বন্দ্ব) সংশয়।
উদ্ধত্য- চঞ্চল।
অবিদ্যা- সত্যস্বভাবকে না জানা।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-২৯ জুন ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।