ধর্মের অনন্তগুণের শরণ গ্রহণ দেশনা।

"ধম্মং সরণং গচ্ছামি" অমৃতগুণসম্পন্ন ধর্মের অনন্তগুণের শরণ গ্রহণ করছি দেশনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

ধর্মের অনন্তগুণের শরণ গ্রহণ দেশনা।


ধর্মের অনন্তগুণের শরণ গ্রহণ সম্পর্কে ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয় ত্রিপিটকের আলোকে মূল্যবান দেশনা করেছেন।

ধর্মকে কেউ সৃষ্টিও করতে পারে না, ধ্বংসও করতে পারে না। ধর্ম কারোর কর্তৃত্ব বিষয় নয়। ধর্ম কারোর অধীনে থাকে না। ধর্ম কারোর বাণী নয়। ইহা সকল সত্ত্বদের সম্পর্কিত স্বভাবধর্ম।

এ স্বভাবধর্মতা বুদ্ধ উৎপন্ন না হলেও নিত্য বিদ্যমান থাকে। ধর্ম সত্যের সত্য, প্রকৃতির প্রকৃত বাস্তব সত্যকে অত্যন্ত উচ্চতর ত্বরিত তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন বুদ্ধ উৎপন্ন হলেই ব্যাখ্যা করতে পারে। বুদ্ধ উৎপন্ন না হলে ধর্মকে ব্যাখ্যা করা কারো পক্ষে সম্ভবপর হয় না।

স্বভাব ধর্মকে ইংরেজীতে বলা হয় The Law of Nature. ধর্ম প্রধানত কুশল এবং অকুশল দুই প্রকার হয়।

অজ্ঞতা হেতু নিশ্রিত নিশ্রয় ও তৃষ্ণার মূলে কর্ম, সংস্কার কুশল ও অকুশল কর্ম সম্পাদন করে সত্ত্বগণ সংসারে বিচরণ করে। ইহা স্বভাব ধর্মের নিয়ম।
মহোপকারী সর্বজ্ঞ বুদ্ধ - সকল পাপকর্ম বর্জন করা, সকল পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা, স্বীয় চিত্তকে পরিশুদ্ধ রাখতে বলেছিলেন। "সব্ব পাপস্স অকরণং, কুসলস্স উপসম্পদা। সচিত্ত পরিযো দাপনং, এতং বুদ্ধান সাসনং"

তাই তো শরণ করি "বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি- শাস্তা (আদর্শ শিক্ষক-Good teacher) বুদ্ধের অনন্তগুণকে শরণ করছি। স্বভাবধর্ম (Philosophy (দর্শন) নয়। স্বভাবধর্ম Isn't ism (মতবাদ) নয়। স্বভাবধর্ম Philosophy নয়। Philosophy হল অনুসন্ধান তত্ত্ব। স্বভাবধর্ম হল বাস্তব সম্মত অকৃতিম বিদ্যমান ধর্ম- It is just The Law of Nature existing by itself.

সবার স্বভাব ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান ভাণ্ডার পূর্ণ হোক।

মরণানুস্মৃতি ভাবনার ১২টি সুফলঃ-

১। মরণানুস্মৃতিকে পুনঃপুন মনসিকার করলে আসেবন প্রত্যয় হয়, মরণানুস্মৃতিতে অবিচল হয়।

২। নিবরণ দূর হয়, ধ্যানাঙ্গ উৎপন্ন হয়, উপচার ধ্যান লাভ করে।

৩। মরণানুস্মৃতি ভাবনা করলে সদা অপ্রমাদ হয়।

৪। ০৯টি ভবের গতিকে বিমুখ হয়।

৫। প্রাণের মায়া নিকন্তি (অনুশয় ক্লেশ) দুর্বল হয়।

৬। পাপকে ঘৃণা করে।

৭। ব্যবহার্য বস্তুযোগাড় কমে।

৮। বস্তু কৃপণতা করে না।

৯। অনিত্য সংজ্ঞা উৎপন্ন হয়।

১০। অনিত্য সংজ্ঞা উদয়ের ফলে দুঃখ, অনাত্মা সংজ্ঞাও স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়।

১১। মরণানুস্মৃতি না করলে মরণ মুহুর্তে- রাক্ষস, ভূত-প্রেত, সাপ, ডাকাত, চোর, ঘাতকের হাতে অতর্কিত হামলা শিকার হবার ন্যয় ভয়ভীতি, আতঙ্ক, হতবাক, হতভম্ব হয়ে মরে।

তবে, মরণানুস্মৃতি ভাবনা করলে- ভয়ভীতি, আতঙ্ক, হতবাক, হতভম্ব, মুমূর্ষু না হয়ে সৎজ্ঞানে মরণ হয়।

১২। কোন কারণে ইহ জীবনে অমৃত নির্বাণকে প্রত্যক্ষ করতে না পারলেও দেহ ভেঙে মারা যাবার পর সুগতি সদ্গতি প্রাপ্ত হয়। সবার মরণানুস্মৃতি ভাবনার প্রভাবে অন্তিমে অমৃত নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার জ্ঞান প্রজ্ঞা উৎপন্ন হোক।

[চার নিমিত্তে মৃতদেহ নিমিত্তকে দেখে মন অস্থির হয়ে রাজকুমার সিদ্ধার্থ সন্ন্যাস নিমিত্তকে দেখে মহাভিনিষ্ক্রমণ গৃহত্যাগ করেছিলেন]

সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের
বেতবুনিয়া কেন্দ্রিয় বিহার
কাউখালী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-১৯ জুলাই ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।