ভিসা জালিয়াতি ও অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমন-Foreign visa।

ভিসা জালিয়াতি ও অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমন-Foreign visa.

Date-11 march 2021, 08:16PM

ভিসা জালিয়াতি ও অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমন-Foreign visa


মানুষ কর্মের অধীন। তাই প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে। কেউ কেউ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী কিংবা ব্যবসার মাধ্যম খুঁজে পেলেও প্রত্যেকের দ্বারা সেই জীবিকা অর্জনের পথটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। আবার অনেকে জীবিকা অর্জনের জন্য উপর্যুক্ত করে নিজের যোগ্যতা অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়।

     বেকরত্বের গ্লানি মোচন করতে এদিক সেদিক কাজের সন্ধান করার সময় অসাধু কিছু লোক প্রথমে অত্যন্ত ঘনিষ্টতা দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে কিংবা স্বপরিবারে ইউরোপ নিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে আশ্বস্থ করে। 

অনেকেই অপরিচিত/ পরিচিত লোক কিংবা অনলাইনে পরিচয়ের মাধ্যমে কিংবা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে সেই বিদেশী ভিসা নামক সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে থাকে। প্রতারকরা প্রথমে মিষ্টি মিষ্টি কথার জালে ফেলে এই দপ্তর-সেই দপ্তরের লোক/ মামা-খালু পরিচয় দিয়ে থাকে। ভিসা প্রসেসিং এর নামে কয়েক দফায় লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। 

টাকা দেওয়ার পর প্রতারক কর্তৃক প্রদত্ত ভিসা ও বিমান টিকেট এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট নিয়ে বেকারত্ব মোচনের জন্য অনেক আশা ভরসায় যেই দিন বিমান বন্দরে যায়, সেইদিনই বুঝতে পারে ভিসা ও বিমানের টিকেট সবই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। এরপর প্রতারকের মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ কিংবা বিভিন্ন অযুহাত দেখায়। 

     অন্যদিকে ভিন্ন উপায়ে মানব পাচারকারীর হাতে পরে নদী পথে অনেকে বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার পথে নৌকা/ট্রলার ডুবির ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। সংবাদ মাধ্যমে অনেক ভুক্তভুগীদের নিকট জানা যায়, এভাবে বিদেশ যাওয়ার পর একধরণের বন্দি জীবন যাপন করতে হয়। 

মানব পাচারকারী চক্র বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। অনেকে চাহিদা মোতাবেক টাকা দেওয়ার পরও কাঙ্খিত স্থানে যেতে পারছে না বরং অনেককে করুণ পরিণতির স্বীকার হতে হচ্ছে। আবার অনেকে সহায় সম্বল হারিয়ে জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।  

     এই ধরণের প্রতারণার স্বীকার হয়ে সর্বস্ব হারানো লোকের অভাব নেই। প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যমে এই ধরণের প্রতারণার স্বীকার লোকদের সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।

     বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে সবার জীবিকা অর্জনের সুযোগ না থাকায় অনেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রবাসে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু বিদেশে নেওয়ার বিভিন্ন ভাল এজেন্সির তুলনায় খারাপ এজেন্সি ও মানব পাচারকারীর সংখ্যাও যে কম নয় সেটা মাথায় রাখতে হবে। 

আসল ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, কাজের ধরণ, চুক্তির মেয়াদ, লাভ-ক্ষতি, কোম্পানি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিয়ে বিদেশে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকে যাচাই বাচাইকে ঝামেলা মনে করে। বিদেশে গিয়ে ঝামেলায় না জড়িয়ে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে নেওয়া ভাল। এসব না জেনে কারো প্রতি অতি বিশ্বাসী হয়ে বিদেশ যাওয়া উচিত নয়। 

       *** প্রবাসী বন্ধু ও প্রবাসে গমনে ইচ্ছুক বন্ধুদের সুবিধার্থে  বাংলাদেশ সরকারের ওয়েব পোর্টালে প্রদত্ত কিছু নির্দেশনা নিম্নে তুলে ধরা হলো :-  

      বিদেশে যাওয়ার পূর্বে সরকারীভাবে প্রদত্ত কিছু করণীয় নির্দেশনা-

      স্ব-উদ্যোগে বা আত্মীয়-সজনের মাধ্যমে ওয়ার্ক-পারমিট/এনওসি/এন্ট্রি-পারমিট সংগ্রহ করলে জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে উপস্থিত হয়ে বা রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্রের (Emigration Clearance) জন্য আবেদন করার নিয়ম আছে। 

 

      ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্য যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে তার বিবরণ- 

১) জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে নিবন্ধনকৃত কার্ড;

২) ভিসার পৃষ্ঠাসহ পাসপোর্টের প্রথম ০৬ পৃষ্ঠার ফটোকপি;

৩) মূল ভিসা এ্যাডভাইস/এন্ট্রি-পারমিট/ওয়ার্ক-পারমিট/এনওসি ও ফটোকপি;

৪) ১৫০/- টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে ব্যক্তিগত অঙ্গীকারনামা;

৫) পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা হতে রিলিজ অর্ডার বা প্রেষণপত্র;

৬) একক ভিসার বিদেশগামী মহিলার ক্ষেত্রে আইনানুগ অভিভাবক থেকে ১৫০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অনাপত্তি পত্র।

৭) পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে সরকার/স্বায়ত্বশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা হতে রিলিজ অর্ডার।  

 

     বিদেশে যাওযার পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা ?

১) পাসপোর্ট, ২) চাকুরীর চুক্তিপত্র, ৩) ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা ? ৪) দূতাবাসের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার, ৫) ভিসা, ৬) জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র, ৭)  মেডিকেল রিপোর্ট, ৮) টিকিট, ৯) টাকা প্রদানের রশিদ।


      চুক্তিপত্র পরীক্ষা :-

        বিদেশে যাওয়ার কমপক্ষে দুইদিন আগে এজেন্সির কাছ থেকে চুক্তিপত্র নিতে হবে এবং চুক্তিপত্রে যে বিষয়গুলো পরীক্ষা করে নেবেন :-

১) চাকুরীর নাম,  ২) কোম্পানি বা চাকুরীদাতার নাম, ঠিকানা, 

৩) কর্মক্ষেত্র,  ৪) চাকুরীর মেয়াদ/চুক্তির মেয়াদ, 

৫) মাসিক বেতন, ৬) ছুটি ও সামাজিক নিরাপত্তা, 

৭) যাওয়া আসার বিমান ভাড়া, ৮) নিয়মিত কর্ম-ঘন্টা এবং সাপ্তাহিক ছুটি, 

৯) ওভার-টাইম, ১০) বাৎসরিক ছুটি, ১১) বেতনসহ ছুটি না বেতন ছাড়া ছুটি, 

১২) অসুস্থতার ছুটি, ১৩) মেডিকেল বা স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা, 

১৪) কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত অসুস্থতা বা মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরনের অংক, 

১৫) যাতায়াত ভাড়া, ১৬) খাবার ভাতা, ১৭) বাসস্থান ভাতা, 

১৮) মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি। 

     বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সুবিধার্থে চালু করেছে প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার। এই কল সেন্টার সাপ্তাহের ০৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। 

কল সেন্টারের যোগাযোগ নাম্বার হলোঃ 

 +8801784 333 333,  

+8801794 333 333,  

+8802-48 314 888.

কলসেন্টারের প্রদত্ত সেবা সমূহ হচ্ছে-

১) পাসপোর্ট সংক্রান্ত, মৃতদেহ আনায়ন ও আর্থিক অনুদান, ক্ষতিপূরণ ও বকেয়া বেতনের অর্থ প্রাপ্তি বিষয়ক তথ্য প্রদান।

২) প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

৩) দুতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের আইনগত সহায়তা সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা প্রদান।

৪) অসুস্থ্য, আহত অথবা পঙ্গু কর্মীদের দেশে ফেরত আনা ও আর্থিক সাহায্য সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা প্রদান।

৫) প্রবাসে আটকে পরা কর্মীদের মুক্তকরণ সম্পর্কিত তথ্য সেবা প্রদান।

৬) এছাড়াও প্রবাসী কর্মীদের যেকোন প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা প্রদান।  

 

কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরো কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো-

(১) বৈধভাবে ও নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।

(২) প্রথমে লাভ ক্ষতির হিসাব করুন, তারপর বিদেশ গমনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।

(৩) সংশ্লিষ্ট ডিইএমওতে ডাটাবেজ নাম নিবন্ধন করুন।

(৪) গন্তব্য দেশের ভাষা জেনে নিন এবং সংশ্লিষ্ট কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।

(৫) সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট এর মাধ্যমে বিদেশ যান। 

(৬) নিজের পাসপোর্ট নিজেই রাখুন এবং ভিসা সংগ্রহ ও যাচাই করুন।  

(৭) ভালমত পড়ে ও বুঝে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন। 

(৮) অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

(৯) সংশ্লিষ্ট ডিইএমও অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ দিন।

(১০) বিদেশে যাওয়ার পূর্বে ০৩ (তিন) দিনের প্রাক বর্হিগমণ প্রশিক্ষণে অংশ নিন।

(১১) বিদেশে যাওয়ার পূর্বে ০২ (দুই)টি ব্যাংক হিসাব খুলুন। 

(১২) বিএমইটির স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করুন। 

(১৩) বিদেশে যাওয়ার পূর্বে সমস্ত কাগজপত্রের ০৩ সেট ফটোকপি করে সংরক্ষণ করুন।

       আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন-https://probashi.gov.bd/

       প্রবাসী/প্রবাসে গমন ইচ্ছুক ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ না জেনে এবং যাচাই-বাচাই না করে কারো কথায় বিশ্বাস করে নিজের ও পরিবারের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। প্রবাসীদের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করুন। নিজে নিরাপদে থাকুন এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।  

       ***বিদেশ গমনেচ্ছুক প্রার্থীর আরেকটি দরকারী ডকুমেন্ট হলো অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (Online Police Clearance Certificate Bangladesh)। তাই চাইলে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েভ সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন অথবা নিচে দেওয়া আমার ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন অথবা এখানে ক্লিক করুন।

#আমার লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

ধন্যবাদ।


Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মহামঙ্গল সূত্র পালি থেকে বাংলা-২০২১।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।